[মান – ৫] বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো।

(উত্তর)

সূচনা : বাংলা গানের বিবর্তনে ও বিবর্ধনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর যার নাম উঠে আসে তিনি হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর গানগুলি ‘নজরুলগীতি’ নামে পরিচিত। বাংলা গানের ধারায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের সংখ্যা আনুমানিক ৩২৪৯টি। নজরুল রচিত গান সংখ্যায় যেমন বেশি, তেমনি বৈচিত্র্যপূর্ণ।

নজরুলের গানের সম্ভার

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গানগুলিকে বিভিন্ন ভাগে আলোচনা করা যেতে পারে—

ক) প্রেম ও প্রকৃতিমূলক গান : ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’ প্রভৃতি গানে প্রেম ও প্রকৃতির বিষয়ভাবনাই প্রাধান্য পেয়েছে। তাছাড়া এই ধরণের গানই তিনি বেশি লিখেছেন।

খ) ঋতুসংগীত : নজরুলের বহু গানেই ঋতুর প্রসঙ্গ আছে। ‘নিদাঘের খরতাপে’ ইত্যাদি বহু গানে ঋতুর প্রসঙ্গ স্মরণীয়।

গ) রাগাশ্রয়ী গান : ‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ ইত্যাদি বহু গানেই রামকেলি, ঠুংরি, ভৈরবী প্রভৃতি রাগরাগিনীর মিশ্র প্রয়োগে কবির মুনশিয়ানা অনস্বীকার্য।

ঘ) গজল গান : ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ প্রভৃতি বাংলা গজলে রসসিদ্ধ আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

ঙ) স্বদেশ সংগীত : কবির বহু গানে তাঁর স্বদেশপ্রীতির প্রকাশ ঘটেছে। প্রসঙ্গত ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘চল চল চল’ ইত্যাদি গানের কথা উল্লেখযোগ্য।

চ) ইসলামী সংগীত : ইসলাম ধর্মকেন্দ্রিক কবির লেখা অন্যতম গান হল ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ ইত্যাদি।

ছ) অন্যান্য ভক্তিগীতি : কবির ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে শ্যামাসংগীত, কৃষ্ণসংগীত, শিবসংগীত প্রভৃতি গানে।

জ) বিবিধ : এগুলি ছাড়াও নজরুল বেশ কিছু লোকসংগীত, হাস্যরসাত্মক ও প্যারোডি গান, হিন্দি গান ইত্যাদি রচনা করেন। তাছাড়াও মণিমালা, মন্দাকিনী, প্রিয়া ইত্যাদি বেশ কিছু নতুন তালও সৃষ্টি করেন।

কণ্ঠশিল্পী : যাঁদের সুদক্ষ কণ্ঠ ও যোগ্য গায়নে নজরুলগীতি জনপ্রিয়তার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – কানন দেবী, ফিরোজা বেগম, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শচীনদেব বর্মন, ফেরদৌসী রহমান প্রমুখ। 

মূল্যায়ন : এককথায় বাণী ও সুরের বৈচিত্র্যে, নিত্য-নতুন রাগ ও তাল উদ্ভাবনে, পাশ্চাত্য সুরের যথাযথ ব্যবহারে কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা গানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।  

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত