(উত্তর)
বাংলা লোকসংগীত : লোকসংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট শাখা হল লোকগান। পুরনো বাণী ও সুরের ঝংকারে গীত হয় লোকগানগুলি। এই সংগীতের ধারাটি মূলত মৌখিক। বাংলায় লোকসংগীতের অনেকগুলি ধারা লক্ষ করা যায়। দুটি উল্লেখযোগ্য লোকসংগীতের ধারার নাম হল ভাওয়াইয়া, ঝুমুর।
ভাওয়াইয়া
(ক) উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, অসমের গোয়ালপাড়া-সহ বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলের রাজবংশী সম্প্রদায় কর্তৃক রাজবংশী ভাষায় রচিত বিশিষ্ট লোকসংগীতের নাম ‘ভাওয়াইয়া’। ভাওয়াইয়া গানের যারা গায়ক, সেই ঘরছাড়া বিবাগি মানুষদের বলা হয় ‘বাউদিয়া’।
(খ) ভাওয়াইয়া-এর নামকরণ প্রসঙ্গে কেউ বলেন ‘ভাও’(‘ভাব’-এর আঞ্চলিক রূপ) থেকে, কেউ বা বলেন ‘ভাওয়া’ (নদীর চর/নীচু জমি) অঞ্চলের গান বলে এই নাম। আবার কারও মতে ‘ভাওয়াইয়া’ কথাটি ‘বাওয়াইয়া’র পরিবর্তিত রূপ।
(গ) বিরহবিচ্ছেদজনিত নারীর মনের যন্ত্রণা ও হৃদয়ের আর্তি ‘ভাওয়াইয়া” গানের অবলম্বন হলেও এর মূল বিষয় নরনারীর প্রেম। জীবিকার তাগিদে যেসব মানুষ দিনের পর দিন স্ত্রী বা প্রেমিকাকে ছেড়ে ভূস্বামীর মহিষবাথান কিংবা চারণভূমিতে দিনাতিপাত করেন, তাদের বিচ্ছেদের কথাই এই গানের সুরে ও কথায় প্রকাশ পায়। মৈষাল, গাড়োয়ালি, চট্কা ইত্যাদি এই গানের নানা বিভাগ ৷ গোরু বা মোষের চালককে উদ্দেশ্য করে গীত হয় ‘গাড়োয়াল’। মহিষকুঁড়ায় যাওয়া দয়িতের উদ্দেশ্যে গীত হয় ‘মৈষাল’। এবং রঙ্গ-রসিকতার গান হল চুটকি।
(ঘ) ভাওয়াইয়া গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য দীর্ঘ টানা সুরের মাঝে ভাঙন (গলা ভাঙা) হলেও এর বিশিষ্ট লক্ষণ কারুণ্য। ভাওয়াইয়া ও চট্কা গাওয়া হয় ‘দোতারা’ বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে। একারণে অনেকেই এই ধারার গানকে ‘দোতারা গান’ বলে থাকেন।
(ঙ) ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীদের মধ্যে আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, সুরেন রায় বসুনিয়া, সুখবিলাস বর্মার নাম উল্লেখযোগ্য।