(উত্তর)
সূচনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক একজন অত্যন্ত প্রতিভাধর সাহিত্যিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩ – ১৯১৩)। তিনি নিজ প্রতিভায় ভারতীয় সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সংগীতের মিশ্রণ ঘটিয়ে যে সুর ও বাণীর বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেন তার প্রবাহ যেন শ্রোতাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। উনিশ শতকের বিশিষ্ট খেয়াল শিল্পী কার্তিকেয় চন্দ্র রায়ের পুত্র ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল।
বাণী ও সুর : পিতার সুযোগ্য পুত্র দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ পটু ছিলেন। আবার বিলেত-ফেরত দ্বিজেন্দ্রলাল পাশ্চাত্য সুরকেও আত্মস্থ করেছিলেন। এইভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সুরের সমন্বয়ে ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, ঠুংরি, বাউল, কীর্তন, বৈঠকি, স্বদেশি গান, হাসির গান, প্যারোডিতে বিচিত্র, বহুমুখী সুরের প্রয়োগ ঘটিয়ে প্রায় ৩০০টি গান রচনা করেন। অর্থাৎ ভারতীয় সঙ্গীতের কমনীয়তা এবং পাশ্চাত্য সুরের প্রাণশক্তির প্রকাশ তাঁর গানে লক্ষ্যনীয়।
সংস্কৃত লঘুগুরু ছন্দে লেখা ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি ‘এ কি মধুর ছন্দ’ ইত্যাদি গান বাঙালি মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
নাটক ও গান : বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য একজন ঐতিহাসিক নাট্য রচয়িতা হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব কম নয়। তবে ওইসব নাটকে সংগীতের ব্যবহার বিশেষ মাত্রা যোগ করে। ‘সাজাহান’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘মেবারপতন’ – এইসব নাটকে ব্যবহৃত গানগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
বিষয়বৈচিত্র্য : দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সুযোগ্য পুত্র শ্রী দিলীপকুমার রায় পিতার গানগুলিকে বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন – পূজা, দেশ, প্রেম, প্রকৃতি ও বিবিধ। তবে দ্বিজেন্দ্রলাল বাঙালির মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর স্বদেশ বিষয়ক গানের জন্য। তাঁর ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ প্রভৃতি গান চিরস্থানী আস লাভ করেছে।
তাঁর রচিত গানগুলি ‘আর্যগাথা’ গ্রন্থে দুটি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে।