[মান – ৫] তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ কী? একে লেখক আবিষ্কার’ বলছেন কেন?

(১) তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ

নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত একঘেয়ে মন কিছু সময়ের জন্যে অবকাশ খুঁজে নিতে চায়। আর তখন মন উধাও হয় ‘সবচেয়ে সরলতম’ মাছের সন্ধানে। অচেনা, অজানা যেকোনো গ্রামই তখন ‘তেলেনাপোতা’ হয়ে উঠতে পারে। গল্পকথক মাছ শিকারের উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলেন তেলেনাপোতা অভিযানে। অন্যতম গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ (উৎস—‘প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প’ ) গল্পে এক অভিনব শৈলীতে এই আবিষ্কারের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

(২) ‘আবিষ্কার’ বলার কারণ :

‘আবিষ্কার’ বলতে আমরা বুঝি—যার সম্বন্ধে পূর্বে সকলে অজ্ঞাত, তাকে জানার নাম হলো ‘আবিষ্কার’। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের ক্ষেত্রে তেলেনাপোতা এমন এক গ্রাম, যা কথকের নিজের আবিষ্কার। প্রকৃতপক্ষে ‘তেলেনাপোতা’ নামে কোনো গ্রাম নেই। কিন্তু বাংলার সমস্ত গ্রামই তেলেনাপোতা রূপে ব্যঞ্জিত হয়েছে।

মধ্যবিত্ত মানুষের কল্পনাচারী হওয়ার অন্তসার শূন্যতা-কে এই গল্পে তুলে ধরেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। শুধু ‘আবিষ্কার’ নয়, লেখক যেন আরও এক গভীর আত্ম-আবিষ্কারের দিকে আমাদের নিয়ে গিয়েছেন।

তেলেনাপোতা আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে দরিদ্রতম এক গ্রামের রূঢ় বাস্তব জীবনের কথা। মধ্যবিত্ত সমাজ অনেক স্বপ্ন নিয়ে তেলেনাপোতার মতো গ্রাম আবিষ্কারের অগ্রণী হয়। কিন্তু অচিরেই সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। যামিনীর মতো সহায়-সম্বলহীন কোনও নারীর দুঃখ মোচনে নায়ক ব্যর্থ হয়। তেলেনাপোতা আবিষ্কার যেন মানব মনের অতলতায় লুকিয়ে থাকা স্বপ্নের আবিষ্কার। যামিনীর বৃদ্ধা মা ও যামিনীকে গল্প কথক সে আশ্বাস দিয়েছেন, তা শেষপর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ঠিক যেমন স্বপ্নের বাস্তবায়ন অনেকসময় হয়না।

গল্প লেখক তাই মানব মনের অতল গহ্বরে ছলনাময় রহস্যকেই ‘আবিষ্কার’ শব্দের মধ্যে দিয়ে ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। বস্তুত, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের গ্রামটি হলো এক অনাবিস্কৃত ভূগোল।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত