[মান – ৫] ‘একবার ক্ষণিকের জন্যে আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।’—কোন প্রসঙ্গে এই মন্তব্য? তেলেনাপোতা কীভাবে ‘চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে বলে লেখক মনে করেন?

১) প্রসঙ্গ : ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নগর কলকাতা থেকে ব্যস্ত নায়ক মাছ ধরার নেশায় তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হন। যামিনীর বৃদ্ধা মাকে কথা দেন তিনি যামিনীকে বিবাহ করবেন। গল্প-কথক কথা দিয়েও আর ফিরে আসতে পারেননি তেলেনাপোতা গ্রামে। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।

২) রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হওয়ার কাহিনি : ব্যস্ত জীবন থেকে তিন বন্ধু নিজেদের ইচ্ছাসুখে একদিন ‘শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধহয়’ উপস্থিত হন তেলেনাপোতা গ্রামে। প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছেন—

“কাজে কর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠার পর যদি হঠাৎ দু-দিনের জন্যে ছুটি পাওয়া যায়—আর যদি কেউ এসে ফুসলানি দেয় যে কোনো এক আশ্চর্য সরোবরে”।

মানচিত্রহীন অজ্ঞাত গ্রামে তিনবন্ধু এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র দেখান

  • ক) অদ্ভুত সেই ভগ্ন গৃহ।
  • খ) চারিদিকে রোমাঞ্চকর পরিবেশ।

কথক মাছ ধরার নেশায় পুকুরে ছিপ ফেলেছিলেন। তারপর একসময় তার চোখে পড়েছিল এ গল্পের নায়িকা যামিনীকে। ‘যামিনী’ নামের মধ্যে রয়েছে রাত্রির মায়া, না পাওয়ার শূন্যতা।

গল্পের নায়ক নাগরিক মানুষ হলেও তার মধ্যে স্বপ্ন রয়েছে। তার মনে হয়েছে, নিরঞ্জনের মতো তিনি আর এমন মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধাকে কষ্ট দেবেন না। তাই কঙ্কালসার বৃদ্ধার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কথা দিয়েছিলেন, যামিনীকে বিয়ে করবেন। যদিও এই নায়ক শেষপর্যন্ত যামিনীর কাছে ফিরে আসেননি। ফলে তিনিও অন্য আরেক অর্থে নিরঞ্জনসত্তায় পরিণত হন। মধ্যবিত্ত পলায়নী মনকে প্রেমেন্দ্র মিত্র চিনতেন।

ফলে গল্পের পরিসমাপ্তিতে এসে প্রেমেন্দ্র মিত্র জানান, কলকাতায় ফিরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত নায়ক আর কখনোই তেলেনাপোতা গ্রামে ফিরে যাবে না। কেননা, ততদিনে নায়কের মনেরও পরিবর্তন ঘটেছে—“অস্ত যাওয়া তারার মতো তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন ব’লে মনে হবে। মনে হবে তেলেনাপোতা ব’লে কোথাও কিছু সত্যি নেই”।

গল্পের শেষে তেলেনাপোতা কীভাবে চিরন্তন রাত্রির অতলতায় হারিয়ে যায় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছেন লেখক। এই উক্তির মধ্যে নাগরিক মধ্যবিত্ত নায়কের প্রতি তির্যক ব্যঙ্গ উচ্চারিত হয়েছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত