[মান – ৫] ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নিরঞ্জনের ভূমিকায় আসা শহুরে মধ্যবিত্ত নায়ক চরিত্রটির সংবেদনশীলতার পরিচয় দাও।

‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি বাংলা সাহিত্যে অভিনব। এ গল্পে মধ্যবিত্ত মন-মানসিকতাকে লেখক তীব্রভাবে আঘাত করেছেন। গল্পের কথক হলেন গল্পের নায়ক। তাঁর চরিত্রের আলোচনায় কতকগুলি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। যেমন–

  • এক॥ শহুরে মানুষের প্রতিনিধি: এ গল্প স্বপ্ন দেখার গল্প, স্বপ্ন পূরণের গল্প নয়। আর যাকে অবলম্বন করে এ গল্প কেন্দ্রস্থ হয়েছে সেই নায়ক হয়ে ওঠেন শহুরে মানুষের একমাত্র প্রতিনিধি।
  • দুই ।। সংবেদনশীল মন: তিন বন্ধুর মধ্যে গল্পকথক অপেক্ষাকৃত সংবেদনশীল। দুই বন্ধু নিজেদের মতো পানাসক্ত ও নিদ্রায় আচ্ছন্ন হলেও তার চোখে ঘুম আসে না। অবশেষে কোনোরকমে রাত কাটিয়ে যখন সকাল হয় তখন তিনি যান নির্জন স্থানে পুকুরটিতে মাছ ধরতে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। জল ভরতে আসে যামিনী। তার চোখে কৌতূহল।
  • তিন॥ নায়কের প্রতিশ্রুতি: যামিনী বলেছিল তার মা বারবার তার কাছে জানতে চেয়েছে, নিরঞ্জন এসেছে কিনা। তখন গল্পের কথক জানতে পারে নিরঞ্জন নামের এক যুবক কথা দিয়েও কথা রাখেনি। কথকের মনে হয় যামিনীকে ঠকিয়েছে নিরঞ্জন। ফলে গল্পের কথকের মনে হয় তিনি যামিনীকে ঠকাবেন না।
  • চার ।। উদার মানসিকতা: কিন্তু তার এই কথা বাস্তবায়িত হয় না। যদিও আমরা প্রত্যক্ষ করি নায়কের মন উদার। তার দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে অনেকখানি প্রসারিত। তাই বৃদ্ধা যখন যামিনীর কথা শোনান এবং বলেন এই মেয়েটির জন্যেই তিনি মরতে পারছেন না, তখন নায়কের মনের অবস্থা নির্দেশে প্রেমেন্দ্র মিত্র লেখেন—“একাস্ত ইচ্ছে সত্ত্বেও চোখ তুলে একটিবার তাকাতে আপনার সাহস হবে না। আপনার নিজের চোখের জল বুঝি আর গোপন রাখা যাবে না”। 
  • পাঁচ।। পলায়নবাদী মানসিকতা: গ্রাম থেকে কথক চলে আসেন শহরে। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিশ্রুতিদাতা কথক শেষপর্যস্ত কোনোভাবে ফিরতে পারেন না তেলেনাপোতা গ্রামে। ফলে গল্পের কথক হয়ে ওঠেন পলায়নপর মধ্যবিত্তের অন্য আর এক রূপ।
error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত