[মান – ৫] ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা লেখ।

ভূমিকা

‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নামকরণ অভিনব। এ গল্প প্রচলিত সমস্ত ফর্ম বা টেকনিককে ভেঙে দিয়েছে। মধ্যমপুরুষের বয়ানে রচিত গল্পটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য গল্প।

এর বিষয়বস্তু অসাধারণ। এ গল্পের বিন্যাস কৌশল চমৎকার। আধা-বাস্তব ও স্বপ্নের সম্মিলনে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’-এর নামকরণ অসীম ব্যঞ্জনা প্রদান করে।

সার্থকতা বিচার

‘আবিষ্কার’ শব্দটি ক্রমান্বয়ে বহুবার ব্যবহার করেছেন লেখক। এমন এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ, বহু প্রাচীন এমন ভাঙা বাড়ি, আর রহস্যময় সে বাড়িতে পৌঁছানোর এমন এক কুয়াশা ঘেরা অন্তরীপের মতো পথ বলে দেয়—সত্যি সেখানে মিশে আছে আবিষ্কারের অন্য আর এক অনুভূতি, যা আমাদের কাছে একেবারে নতুন। যা আমরা অন্বেষণ করেছি এবং অবশেষে খুঁজে পেয়েছি—তাই হলো আবিষ্কার। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘Discovery’ । আবার এর পাশে আরেকটি শব্দও আসে, তা হল ‘Invention’.

‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে এমন একটি গ্রামের আবিষ্কার করেছেন এ গল্পের কথক, যা তার কাছে তৃতীয় ভুবনের মতো। তাই এই গ্রামে যাওয়াটা রোমাঞ্চকর। লেখক বারবার ধ্রুবপদের মতো বলে গিয়েছেন ‘আবিষ্কার’-এর কথা। যেমন—

  • ক) তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।
  • খ) হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন।
  • গ) তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে হলে একদিন বিকেল বেলার পড়ন্ত রোদে জিনিসে মানুষে ঠাসাঠাসি একটা বাসে গিয়ে আপনাকে উঠতে হবে।
  • ঘ) তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্যে আরো দু-জন বন্ধু ও সঙ্গী আপনার সঙ্গে থাকা উচিত।

এভাবে ক্রমান্বয়ে ‘আবিষ্কার’ শব্দটি ব্যবহার করে প্রেমেন্দ্র মিত্র এ গল্পের নামকরণকে করেছেন ব্যঞ্জনাধর্মী।

গল্পের শেষে লক্ষ করি কথকের আবিষ্কারের গ্রাম তেলেনাপোতা তাঁর স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। আবিষ্কৃত স্থান পুনরায় হারিয়ে গেছে। ব্যস্ত শহুরে জীবনে একটুখানি নিরিবিলি শান্তির জায়গা এভাবেই একঝলক সামনে এসেই অদৃশ্য হয়। এ গল্পের নামকরণে প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রতীকের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এজন্যে আলোচ্য গল্পের নামকরণ হয়েছে সংগতিপূর্ণ।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত