(ক) চর্যাপদ আবিষ্কার করেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবার থেকে।
(খ) চর্যাপদ্গুলি রচিত হয়েছে আনুমানিক দশম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে।
(গ) সমাজজীবন =
নদীমাতৃক বাংলাদেশ : দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর সমাজ-ইতিহাস-ভূগোলকে উপস্থাপন করেছে চর্যাপদ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের খাল-বিল, নদী-নালা, কাদাময় রাস্তা-ঘাট, ভাসমান নৌকা, গুণটানা, পারাপার করা ইত্যাদি থেকে তৎকালীন ভূগোলের একটি মানচিত্র চোখে পড়ে।
জীবন-জীবিকা : চর্যার মানুষ দৈহিক শ্রমনির্ভর জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। যেমন–
অ। নৌকা টানা, মানুষ পারাপার করা।
আ। ঝুড়িবোনা, বাঁশ ও বেতের অন্যান্য কাজ করা।
ই। তাঁত বোনা।
ঈ। গৃহ নির্মাণ করা।
উ। মদ্য তৈরি করা।
ঊ। মদের পাত্র, তৈজসপত্র ইত্যাদি তৈরি করা।
বাসস্থান : অন্ত্যজ নিচু শ্রেণির ডোম, শবর প্রমুখ বাস করতেন ‘নগর বাহিরে’। তারা ধনী ব্যক্তিদের সঙ্গে নগরে থাকবার কোনো সুযোগ-সুবিধা পেতেন না।
খাদ্য ও সুরাসক্তি : চর্যাপদে তৎকালীন বাঙালি কী খেতেন এবং খাদ্যতালিকায় তারা কোন্ বিষয়গুলি রাখতে পছন্দ করতেন, তার বিবরণ আছে। যথা—
অ। সেকালে প্রধান খাদ্য ছিল ভাত।
আ মাছ, মাংস, দুধ, লাউ খাদ্য হিসাবে প্রিয় ছিল।
ই। পছন্দের বিষয় ছিল তেঁতুল।
ঈ। অনায়াসে চলত মদ্যপান।
বিবাহ ও যৌতুক : বাদযন্ত্র, নৃত্য, হৈ-হুল্লোড়ে বিবাহ সম্পন্ন হত। অনুলোম প্রতিলোম বিবাহ তখন প্রচলিত ছিল, বিবাহে যৌতুক নেওয়া হত।
নৃত্য-গীত-অভিনয় : বিবাহ ছাড়াও ধর্মীয় উৎসব-পার্বণে নৃত্য-গীতের প্রচলন ছিল। নাট্যাভিনয় জনপ্রিয় হয়েছিল। চর্যাকার লিখেছেন—”নাচন্তী বাজিল গায়ন্তী দেবী বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই।”
খেলাধূলা : অশ্বচালনা জনপ্রিয় ছিল। পাশাখেলার প্রচলন ছিল।
পুলিশ-প্রশাসন : চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল। পুলিশ-দারোগা দস্যু দমনে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন।
অবৈধ সম্পর্ক ও সামাজিক অধঃপতনের অন্যান্য চিত্র : গভীর রাতে গৃহবধূর অন্যত্র গমনের চিত্র পাওয়া যায়। মাতালের উৎপাত ছিল। ব্রাহ্মণের বৃত্তি নিয়ে কটাক্ষ করা হত।