--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

শূদ্রক সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখো। [২০১৮] [অথবা] ‘মৃচ্ছকটিকম্’ নাটকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো।

[উ] কবিরূপে প্রথিতযশা মহারাজ শূদ্রক অগাধ শক্তিশালী ছিলেন। তিনি ঋগ্‌বেদ, সামবেদ, গণিতশাস্ত্র এবং হস্তবিদ্যায় নিপুণ ছিলেন। নাট্যকার স্বয়ং নিজের রচনার সূচনায় সূত্রধারের মুখে নিজের পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন।

রচনাবলি—শূদ্রকের রচনাগুলি হল– (১) পদ্মপ্রাভূতক    (২) মৃচ্ছকটিকম্ (দশ অঙ্কের) প্রভৃতি।

মৃচ্ছকটিকম্‌

শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিকম্’ শুধু নাট্যসাহিত্যেই নয়, সমগ্র সংস্কৃত সাহিত্যেই এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এমনভাবে সাধারণ মানুষকে নিয়ে সংস্কৃত ভাষায় কখনও কোনো সাহিত্য রচিত হয়নি। এদিক দিয়ে সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে ‘মৃচ্ছকটিকম্’-এর স্থান এক এবং অনন্য। শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিকম্’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাটকগুলির মধ্যে একটি।

রচনাকাল—খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যেই শূদ্রকের এই নাটক রচিত হয়েছিল।

উৎস—গুণাঢ্যের ‘বৃহৎকথা’ প্রভৃতি লোকপ্রচলিত কাহিনি থেকে নাট্যকার কাহিনিবস্তু সংগ্রহ করেছেন।

কাহিনি—উজ্জয়িনীর বারবনিতা বসন্তসেনা চারুদত্তের প্রতি আকৃষ্ট। অন্যদিকে রাজশ্যালক লম্পট, দুষ্ট চরিত্রের শকার বসন্তসেনার প্রতি প্রণয়প্রার্থী। বসন্তসেনা অবশ্য শকারকে আদৌ পছন্দ করেন না। বসন্তসেনাকে না-পেয়ে ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ শকার ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা টিপে ধরলে বসন্তসেনা মূর্ছিত হয়ে পড়েন। শকার তাকে মৃত ভেবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চারুদত্তকে মিথ্যাভাবে হত্যায় অভিযুক্ত করে এবং রাজার সাহায্যে অন্যায়ভাবে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করায়। এদিকে বসস্তসেনার জ্ঞান ফিরলে চারুদত্তকে বাঁচাতে তিনি বধ্যভূমিতে যান। অন্যদিকে আর্যক উজ্জয়িনী অধিকার করে অত্যাচারী রাজা পালককে সিংহাসনচু রেন। আর্যকের একসময়ে উপকারী চারুদত্ত রাজ্যখণ্ড ও প্রধানমন্ত্রিত্ব পেয়ে বসন্তসেনাকে বধূর মর্যাদা দিয়ে ঘরে নিয়ে আসেন।

নাট্যবৈশিষ্ট্য—‘মৃচ্ছকটিকম্’-এ শূদ্রক অসাধারণ নাট্যকৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন (১) শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিকম’ একটি সামাজিক প্রেমমূলক বাস্তবধর্মী নাটক। এর সঙ্গে কৌশলে রাজনৈতিক ঘটনাযুক্ত হয়ে এক নতুন তাৎপর্য দান করেছে। (২) বস্তুত তথাকথিত প্রাকৃত ও তুচ্ছ চরিত্রগুলির মধ্যে মনুষ্যত্ব আবিষ্কার এই নাটকের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। (৩) সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব লক্ষণীয়। (৪) সিরিয়াস রচনায় সামাজিক বিশৃঙ্খলার চিত্র উপস্থাপন এবং সামাজিক অস্থিরতাকে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনরোষে রূপান্তর কৃতিত্বের দাবি রাখে। (৫) এই নাটকের ভাষাশৈলীও অনবদ্য। নানা চরিত্রের মুখে নানা প্রাকৃতের ব্যবহার হয়েছে। যেমন শৌরসেনী (বসন্তসেনা, সূত্রধার, বীরক, চন্দনক), প্রাচ্যা (মৈত্রেয়), মাগধী (সংবাহক), শাকারী (সংস্থানক), চাণ্ডালী (চণ্ডাল), ঢক্কী (জুয়াড়ি) প্রভৃতি। (৬) এই নাটকের সংলাপ সর্বত্র চরিত্রানুগ, গতিশীল এবং সংক্ষিপ্ত। (৭) এই নাটকের প্লট বেশ জটিল। এর নানা উপকাহিনি মূল কাহিনিকে সমৃদ্ধ করেছে। (৮) সাধারণ মুখে মানায় এমন প্রবাদ, বাগ্‌ভঙ্গি, উপমা, দৃষ্টান্তের যোগে চরিত্রগুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নাটকের নামকরণ, বাস্তবতা, বৃহৎ সামাজিক ব্যবস্থার পরিসর প্রভৃতি কারণে নাটকটি বেশ সমাদৃত।

মূল্যায়ন—পরিশেষে বলা যায়– ‘মৃচ্ছকটিকম্’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাটকগুলির মধ্যে একটি।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত