[উ] ভূমিকা—মহাকবি ভাসের তেরোখানি নাটকের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক হল ছয় অঙ্ক বিশিষ্ট উদয়ন, বাসবদত্তা ও পদ্মাবতীর কাহিনি অবলম্বনে রচিত ‘স্বপ্নবাসদত্তম্’। আলংকারিক রাজশেখর এই নাটকের প্রশংসা করে বলেছেন যে, ভাসের সমগ্র রচনাবলি যখন অগ্নিপরীক্ষার জন্য নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, তখন নাকি এই নাটক আগুনে পুড়ে যায়নি।
স্বপ্নবাসবদত্তম্’ নাটকের বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
(১) বিষয় বিন্যাসে দক্ষতা
(ক) ‘স্বপ্নবাসবদত্তম্’-নাটকে প্রেম ও বিবাহ মন্ত্রীর যন্ত্র হয়েছে। (খ) অবন্তিকার আত্মগোপন উদয়নের চরিত্র মহৎ করে এবং পদ্মাবতী তাঁর প্রতি আসক্তা হন। (গ) দ্বিতীয় অঙ্ক পুরুষবিহীন। ভাষা প্রাকৃত। পদ্মাবতী ও বাসবদত্তার কথোপকথনে চরিত্রের প্রকাশ। (ঘ) চতুর্থ অঙ্কে বাসবদত্তার প্রতি উদয়নের একনিষ্ঠ প্রেম বর্ণিত হয়েছে। (ঙ) পঞ্চম অঙ্কে সমুদ্রগৃহে স্বপ্নদৃশ্যে উদয়ন ও বাসবদত্তার ক্ষণিক মিলন। (চ) ষষ্ঠ অঙ্কে উদয়ন ও বাসবদত্তার পুনর্মিলনে ধাত্রীর আনা চিত্রই উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেছে।
(২) বিভিন্ন রসের উদ্রেক
এই নাটকে একদিকে কোমল প্রেম ও অত্যন্ত উল্লাস, অন্যদিকে স্নায়বিক দুর্বলতা, উত্তেজনা, ভীতি, বিস্ময় থেকে একে একে করুণ, বিপ্রলম্ভ, শৃঙ্গার (প্রেম), ভয়ানক (ভীতি), ও অদ্ভুত (বিস্ময়) রসের সৃষ্টি হয়েছে।
মূল্যায়ন—কালিদাস-পূর্ববর্তী নাট্যকার ভাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক হলো স্বপ্নবাসবদত্তম্’। কাহিনি উপস্থাপনে, সংলাপের সহজ সরল ভঙ্গিতে, মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে, মানবিক আবেদন ও রস পরিবেশনের কুশলতায় মহাকবি ভাসের আলোচ্য নাটকটি বিশেষ কৃতিত্বের দাবি রাখে।