‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকের বিষয়বস্তু ও কালিদাসের নাট্যবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

[উ] সূচনা = মহাকবি কালিদাস রচিত তিনটি নাটকের মধ্যে ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‌’ সর্বশ্রেষ্ঠ। এটি সাত অঙ্কের একটি নাটক। রাজা দুষ্যন্ত ও শকুন্তলার কাহিনি এতে বর্ণিত হয়েছে।

বিষয়বস্তু = হস্তিনাপুরের ভরতবংশীয় রাজা দুষ্যন্ত মৃগয়ায় বের হয়ে পথ ভুল করে মালিনী নদীর তীরে মহর্ষি কণ্বের আশ্রমে প্রবেশ করেন। সেখানে শকুন্তলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গান্ধর্ব মতে তাঁকে বিবাহ করে রাজধানী ফিরে যান। যাওয়ার সময় দুষ্যন্ত শকুন্তলাকে তার নামাঙ্কিত একটি আংটি দিয়ে যান। এদিকে দুষ্যন্ত-ভাবনায় আনমনা শকুন্তলাকে অভিশাপ দেন দুর্বাসা ঋষি। ফলে রাজধানীতে ফিরে এসে দুষ্যন্ত ভুলে যান ধর্মপত্নী শকুন্তলাকে। বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুনি কণ্ব শকুন্তলাকে স্বামীর ঘরে পাঠান। কিন্তু পথ-মধ্যে শকুম্ভলা হারিয়ে ফেলেন দুষ্যন্তের দেওয়া অভিজ্ঞানটি। অভিজ্ঞান দেখতে না পেয়ে দুষ্যন্ত শকুস্তলাকে রাজসভায় অপমান করে তাড়িয়ে দেন। মা মেনকার সহায়তায় শকুন্তলা আশ্রয় নেন মারীচের তাপোবনে। সেখানে শকুন্তলার অপরূপ সুন্দর পুত্র সর্বদমনের জন্ম হয়। অনেক পরে এক জেলের কাছে দুষ্যন্তের নামাঙ্কিত আংটি পেয়ে রাজার শকুন্তলা সংক্রান্ত সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে যায়। অবশেষে ইন্দ্রকে যুদ্ধে সহায়তা করে স্বর্গ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে মারীচের আশ্রমে সপুত্র শকুন্তলার সঙ্গে দুষ্যন্তের মিলন ঘটে।

নাটকের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য = কাহিনি বর্ণনার মুনশিয়ানা সর্বজনস্বীকৃত। নায়িকা শকুন্তলা চরিত্রে পরিণতি এখানে লক্ষ করা যায়। নাটকের প্রকৃতি বর্ণনা এককথায় অনবদ্য। উপমা ব্যবহারে কালিদাসের শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজনবিদিত। সেইজন্য বলা যায়–“উপমা কালিদাসস্য”।

[] কালিদাস মানবতাবাদী কবি। এবং এই ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‌’ নাটক সম্পর্কে বলা হয়—“কালিদাসস্য সর্বস্বম্‌ অভিজ্ঞানশকুন্তলম্‌”। কারণ কবির পরিণত প্রতিভা মূর্ত হয়েছে এই নাটকে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত