[উ]
ভূমিকা—১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনের প্রতি আগ্রাসন চালায়। যুদ্ধে চিন মিত্রপক্ষে যোগ দিলেও যুদ্ধের পর চিন কোনো সুবিচার পায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে চিনে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে এক আন্দোলন শুরু হয় যা, ৪ মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত।
কারণ
এই আন্দোলনের বিভিন্ন কারণগুলি হল—
(ক) ইউয়ান-সি-কাই এর নৃশংসতা : চিনের ইউয়ান-সি-কাই চিনে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সমস্ত সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করে তিনি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে অপমানজনক শর্তে ঋণ নেওয়ার জন্য কথাবার্তা শুরু করেন। যারা এর বিরোধিতা করেন তাদের হত্যা করা হয়।
(খ) কুয়োমিতাং দল নিষিদ্ধ : সান-ইয়াৎ-সেন ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউয়ান-এর বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর ডাক দেন। কিন্তু ইউয়ানের বাহিনী বিপ্লবীদের দমন করতে সক্ষম হয় এবং কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর ফলে চিনা জনগণের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়।
(গ) জাপানের একুশ দফা দাবি : সমগ্র চিনকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান চিনের কাছে ‘একুশ দফা দাবি’ পেশ করে।
(ঘ) বিদেশি পণ্যের বাজার : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর চিনের অভ্যন্তরে জাপান-সহ অন্যান্য পুঁজিপতি দেশগুলি বাজার দখলের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। ফলে চিনে নতুন গড়ে ওঠা শিল্পগুলি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়।
(ঙ) প্রত্যক্ষ কারণ : বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিনে আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে শান্তি সম্মেলনে চিনের আবেদনে কেউ কর্ণপাত করেনি। এই অবস্থায় চিনের প্রতিনিধিরা শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন।
আন্দোলনের সূত্রপাত
বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিনের সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই পরিস্থিতিতে চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-ডু-শিউর ডাকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হাজার হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে পিকিং-এর ‘তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার’-এ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই ৪ মে-র আন্দোলন ক্রমে চিনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাদের জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল ‘জিউগুয়ো’ অর্থাৎ দেশ বাঁচাও। চিনের প্রজাতন্ত্রী সরকার প্রথমে দমননীতির দ্বারা আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন দাবানলের মতো চিনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
৪ মে-র আন্দোলনের গুরুত্ব
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে চিনে যে সাংস্কৃতিক নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল তারই ফলশ্রুতি ছিল ৪ মে-র আন্দোলন। ৪ মের আন্দোলন ছিল চিনের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
(ক) দেশাত্মবোধ ও আধুনিকতার উদ্ভব : ৪ মের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চিনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের সূচনা হয়।
(খ) সরকারের নতি স্বীকার : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে চিন সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয়ে ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দেয় ও ভার্সাই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করবে না বলে ঘোষণা করে।
(গ) কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা : এই আন্দোলনের ফলেই চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে।
(ঘ) সাংস্কৃতিক অগ্রগতি : এই সময় চিনে বহু বইপত্র ও পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হলে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে। চিনে নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়।