বিভিন্ন ধরণের জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। [৮]

[উ

] সূচনা—পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজ অসংখ্য জাদুঘরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জাদুঘর বিভিন্ন ধরনের, যেমন—শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের সামগ্রী সংরক্ষণ করে সেসব বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করে। আবার কোনো কোনো জাদুঘর নির্দিষ্ট কোনো একটি বা গুটিকয় বিষয়ের সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং সেগুলির প্রতি আলোকপাত করে। বিভিন্ন প্রকারের জাদুঘর সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল

(১) বিশ্বকোশ জাদুঘর—বিশ্বকোশ জাদুঘর বলতে সুবৃহৎ, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের জাতীয় জাদুঘরকে বোঝায়, যেখানে বিপুল সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের সুযোগ থাকে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিপুল ও অসাধারণ সংগ্রহ থাকে। বিশ্বকোশ জাদুঘরের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে ‘সর্বজনীন জাদুঘর’ বলা হয়।

(২) প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর—প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করা হয়। এই ধরনের জাদুঘর দুইধরণের হতে পারে—খোলা জায়গায় অবস্থিত এবং অট্টালিকার অভ্যন্তরে অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের উদাহরণ হল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম।

(৩) শিল্প জাদুঘর—শিল্প জাদুঘরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এসব শিল্পকলা মৃৎশিল্প, আসবাবপত্র, ধাতুর ফলকে খোদিত শিল্প, ভাস্কর্য, চিত্র, নকশা প্রভৃতি নানা ধরনের হতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসমোলিয়ান জাদুঘর হল পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিল্প জাদুঘরের উদাহরণ।

(৪) ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর—কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক গৃহকে কেন্দ্র করে যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক গৃহ বলতে কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মস্থান বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল এমন বাড়ি হতে পারে। ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরে বিভিন্ন নথিপত্র, মানুষের তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রভৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে অবস্থিত হাজার দুয়ারি একটি ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘরের উদাহরণ।

(৫) সামরিক জাদুঘর—সামরিক জাদুঘরে কোনো দেশের সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধসংক্রান্ত নানা নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। সাধারণত এই জাদুঘরে যুদ্ধকালীন অস্ত্রশস্ত্র, অন্যান্য সামরিক সরপ্তাম, সেনাদের পোশাক প্রভৃতি নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। ‘কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম’ প্রভৃতি হল সামরিক জাদুঘরের উদাহরণ।

(৬) বিজ্ঞান জাদুঘর—বিজ্ঞান জাদুঘর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিস্ময় প্রভৃতি বিষয়ের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে। বিজ্ঞানের জাদুঘরগুলি কম্পিউটার, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি পৃথক পৃথক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে পারে। শিকাগোর ‘মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ হল একটি বিজ্ঞান জাদুঘর।

(৭) খোলা আকাশের নীচে জাদুঘর—অতীতের কোনো প্রাচীন অট্টালিকার অনুকরণে খোলা জায়গায় যখন পরবর্তীকালে নতুন করে অট্টালিকা নির্মাণ করে তা দর্শকদের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হয়, তখন তাকে খোলা আকাশের নীচে জাদুঘর বলা হয়। নরওয়ের ‘দ্বিতীয় অস্কারে’র জাদুঘরটি হল খোলা আকাশের নীচে স্থাপিত প্রথম জাদুঘর।

(৮) চলমান জাদুঘর—যখন কোনো চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহ দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে চলমান জাদুঘর বলে। ট্রেন, মোটর ভ্যান প্রভৃতি যানে চলমান জাদুঘর তৈরি করে তা স্থান থেকে স্থানান্তরে পাঠানো হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁর জীবনকাহিনিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রেল একটি ট্রেনে জাদুঘর তৈরি করে। এটি চলমান জাদুঘরের একটি উদাহরণ।

(৯) জৈব পার্ক ও বৃক্ষের বাগান—জৈব পার্ক অর্থাৎ চিড়িয়াখানা এবং বৃক্ষের বাগান এক ধরনের জাদুঘর বলে বিবেচিত হয়। ‘কলকাতা চিড়িয়াখানা’ প্রভৃতি এই ধরনের জাদুঘরের উদাহরণ।

(১০) ব্যক্তিগত জাদুঘর—বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি বা পরিবার নিজস্ব উৎসাহ ও ব্যয়ে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলি ব্যক্তিগত জাদুঘর নামে পরিচিত। ব্যক্তিগত জাদুঘরের একটি উদাহরণ হল নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মোহিত রায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত