[৪] “ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেন থামানো গেল, পাথরের চাঁই থামানো যাবে না কেন?”—ট্রেন থামানোর দরকার হয়েছিল কেন? ট্রেন কীভাবে থামানো হয়েছিল? [২০১৬] / অথবা, ‘অবাক বিহ্বল বসে আছি, মুখে কথা নেই।’-মুখে কথা নেই কেন? [২০১৯] / অথবা, “চোখের জলটা তাদের জন্য”—বক্তা কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন? যে ঘটনায় চোখে জল এসেছিল সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখো।[২০১৭]

[উত্তর] প্রথম অংশ =

কর্তার সিং দুগ্‌গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পটিতে পাঞ্জাসাহেবে ট্রেন থামানোর এক অলৌকিক আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। পরাধীন ভারতবর্ষে খিদে-তেষ্টায় কাতর স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বন্দিদের জল-রুটি দেওয়ার জন্য পাঞ্জাসাহেবে ট্রেন থামানো হয়েছিল।

দ্বিতীয় অংশ =

পাঞ্জাসাহেব গুরু নানকের শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য প্রসিদ্ধ। সেই পাঞ্জাসাহেবের মানুষদের কাছে এক আশ্চর্য বার্তা এসে পৌঁছোয়। দূরের শহরে ফিরিঙ্গিরা গুলি চালানোয় বহু নির্দোষ ভারতীয়’র মৃত্যু হয়েছে এবং জীবিতদের বন্দি করে অন্য শহরের জেলে পাঠাতে ট্রেনে তোলা হয়েছে।

বিপ্লবীরা খিদে-তেষ্টায় কাতর। কিন্তু ট্রেন কোথাও থামানোর নিয়ম নেই। গুরু নানকের স্মৃতিবিজরিত  পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরা এ নির্দেশ মানেনি। তারা প্রথমে আবেদন-নিবেদনের পথে গেল। ইংরেজরা তবু মানল না। জল-রুটি না পেয়ে খিদেয় কাতর বন্দিদের কাছে খাবার পৌঁছোতে পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরাও পিছপা নয়। তারা স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি-ডাল-এর ব্যবস্থা করে রাখে।

মূল কাহিনিটি লেখক জেনেছিলেন তাঁর মায়ের বান্ধবীর থেকে। এ কাহিনি বাস্তব হলেও লেখকের কাছে এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। পাঙ্খাসাহেবের অধিবাসীরা বন্দিদের খাদ্য-পানীয় দিতে ট্রেন থামানোর জন্য এক আশ্চর্য উপায় নেয়, যা ঘটনাক্রম অনুসারে অলৌকিক কাহিনিতে পরিণত হয়। তারা নিজেরাই ট্রেন লাইনে শুয়ে পড়ে। সেইসময় পাঞ্জাসাহেবের বাতাস ‘জয় নিরঙ্কার’ ধ্বনিতে মুখরিত। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিতে দিতে ছুটন্ত ট্রেন তাদের উপর দিয়ে কিছু দূর চলে যায়। তারপর বাধ্য হয়ে থামে। নিজেদের জীবন দিয়ে পাঞ্জাসাহেবের অধিবাসীরা এভাবেই ট্রেন থামায়।

এ ঘটনা শুনে লেখক বিহ্বল হয়ে যান। তাঁর সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মুহূর্তে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রেন থামানো গেলে পাথরের চাঁইও থামানো যায়। ট্রেন থামানোর জন্য আত্মদানকারী অধিবাসীদের জন্য ভক্তি শ্রদ্ধায় কথকের চোখে জল চলে আসে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত