“ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।”—শাসন সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো। (ছাতির বদলে হাতি)

।। ছাতির বদলে হাতি ।।

[উ] ভূমিকা—‘ছাতির বদলে হাতি’ নিবন্ধে সুভাষ মুখোপাধ্যায় মহাজন, জমিদার, জোতদার, তালুকদার প্রমুখের অত্যাচারে শোষিত প্রজাদের দুর্বিষহ জীবনকাহিনি তুলে ধরেছেন।

(১) নিবন্ধের শুরুতে গারো চাষি চেংমানের কাহিনি জমিদারি শোষণের জ্বলন্ত সাক্ষ্য দেয়। হালুয়াঘাট বন্দরে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সে মহাজনের দোকানের ঝাঁপির নীচে আশ্রয় নিলে, মহাজন তার নতুন ছাতা দিয়ে চেংমানকে সাহায্য করে। নগদ পয়সা না নিয়ে ধারে দেওয়া ছাতার বিনিময়ে কয়েক বছর পর মহাজন চেংমানের কাছে হাজারখানেক টাকা দাবি করে এবং বিনিময়ে তার ছত্রিশ বিঘা জমি হস্তগত করে। একইভাবে দেনার দায়ে নিবেদনের ছেষট্টি বিঘা জমি নিয়েছিল মহাজন কুটিশ্বর সাহা। কোদালের বিনিময়ে এক মহাজন চাষির কাছ থেকে নিয়েছিল ১৫ বিঘা জমি।

(২) মনমোহন, কুটিশ্বর সাহার মতো মহাজনদের চক্রান্তে ডালু হাজংদের বংশানুক্রমে শোষণ ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। অন্যদিকে জমিদারের পাওনা না মেটালে চাষি ধানের অধিকার পেত না। চুক্তির ধান, কর্জার ধান, আরো নানা কর দিয়ে চাষি শূন্য হাতে ঘরে ফিরত।

(৩) এরই সঙ্গে প্রচলিত ছিল ‘নানকার প্রথা’, যেখানে প্রজাদের জমির স্বত্ব ছিল না। জমি জরিপের আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা ধার্য হত। আর খাজনা দিতে না পারলে কাছারিতে আটক, মালঘরে আটক, পিছমোড়া করে মার, সম্পত্তি নিলাম করা হত। গারো অঞ্চলের প্রজাদের দুঃখ-কষ্টের কাহিনি প্রাবন্ধিক এভাবে প্রকাশ করেছেন ‘ছাতির বদলে হাতি’ নিবন্ধটিতে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত