[উ] প্রথম অংশ—আর্থিক অভাব এবং সরকারের খাজনার চাপে যখন দেশীয় নাটকের অভিনয় প্রায় বন্ধ হওয়ার দশা সেসময় নাট্যকার শম্ভু মিত্র অল্পখরচে, সাজসজ্জা আড়ম্বর বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অঙ্গভঙ্গিকে সহায় করে এক নতুন অভিনয় রীতির কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তাঁর সন্দেহ ছিল এরকম অভিনয় রীতি বিলিতি বায়োস্কোপ দেখা দর্শক মানবে কিনা। ‘এমনি সময়’ বলতে এই সময়কেই বোঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশ—এখানে যে সাহেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হলেন বিখ্যাত রুশ চিত্র পরিচালক আইজেনস্টাইন। তাঁর পুরো নাম সের্গেই আইজেনস্টাইন।
তৃতীয় অংশ—রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ‘কাবুকি’ থিয়েটার নামক জাপানি থিয়েটারে কলাকুশলীদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। আইজেনস্টাইন জাপানি কাবুকি থিয়েটারের কুশীলবদের অভিনয় দেখে লিখেছিলেন, তাদের নাটকে ভঙ্গির বহুল ব্যবহার আছে। নাইট বেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে শিফটার তৈরি করেন বিভিন্ন আকারের দুর্গদ্বার। এইভাবে মঞ্চে পরিবেশ রচিত হয়। আবার মঞ্চে যুদ্ধ হয় কাল্পনিক তরবারি দিয়ে এবং ভঙ্গির মাধ্যমেই মৃত্যুর দৃশ্য দেখানো হয়। এইভাবে কেবল ভঙ্গির মাধ্যমে নাটকের দৃশ্য কীভাবে বাস্তবসম্মত ও শিল্পসম্মত করে তোলা যায়, রুশ পরিচালক তা লিখেছেন।
চতুর্থ অংশ—ঔপনিবেশিক কলকাতায় সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে একধরনের অন্ধ পাশ্চাত্য অনুসরণ লক্ষ করা যায়। শিল্পরীতি বা শিল্পসৃষ্টি সাহেব বা পাশ্চাত্য পণ্ডিতমহলে প্রশংসিত না হলে তা দেশীয় সমালোচকদের কাছে গৃহীত হত না। যদিও শম্ভু মিত্র তাঁর নাটকের আঙ্গিক খুঁজে পেয়েছিলেন বিভিন্ন প্রাদেশিক নাটকে কিন্তু দেশজ শিল্প কতটা সমাদৃত হবে তা নিয়ে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি এই পরনির্ভরতার সংস্কারকে বিদ্রুপ করেই শম্ভু মিত্র বলেছেন—সাহেব যখন একে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তখন কলকাতার সুধীমহলেও এই নাটক সাদরে গৃহীত হবে।