‘তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।’— বক্তা কে? ভেবেচিন্তে কী প্যাঁচ বের করা হয়েছিল? সেই প্যাঁচের বুদ্ধিটা কীভাবে এসেছিল? [অথবা] বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।‘—বুদ্ধিটি কী? কীভাবে তা বক্তার মাথায় এসেছিল?

[উ] বাংলা নাটকের বিশিষ্ট নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা স্বয়ং শম্ভু মিত্র। উদ্ধ্রিত-অংশে ‘প্যাঁচ’ বা ‘বুদ্ধি’ বলতে নাটকে অভিনয়ের প্রয়োগকৌশলকে বোঝানো হয়েছে।

প্রথম অংশ—‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠীর তীব্র অর্থসংকটের সময় শম্ভু মিত্র এমন এক আঙ্গিকনির্ভর অভিনয়রীতির কথা ভাবেন যেখানে স্টেজ সিনসিনারি, দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞ্চি কিছুর দরকার হবে না। অভিনয়ের জন্য কেবলমাত্র একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার।

দ্বিতীয় অংশ—’বহুরূপী’ যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত তখন তারা এক নতুন নাট্য-আঙ্গিক বেছে নিয়েছিলেন। ভালো মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যসজ্জা ছাড়াই নাটক অভিনয় করার এই রীতি অবশ্য কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। দেশি এবং বিদেশি উভয়ের গভীরেই এর শিকড় নিহিত ছিল।

নতুন নাট্যরীতি উদ্ভাবনের জন্য চারপ্রকার নাট্যরীতি তাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল।(১) পুরোনো বাংলা নাটকে–রথ বা ঘোড়া না থাকলেও রাজার রথে চড়ার ভঙ্গি নাট্যকারের প্রেরণা ছিল। (২) উড়ে যাত্রায়—রাজা দূতকে ঘোড়ায় চড়ে দ্রুত খবর আনার নির্দেশ দিলে, দূত দ্রুত দু-পায়ের মাঝে লাঠি গলিয়ে এমনভাবে প্রস্থান ও প্রবেশ করে যাতে দর্শকরা বুঝে নেয় যে দূত ঘোড়ায় চড়ে এসেছে। (৩) মারাঠি তামাশায়—এক অসহায় চাষির প্রথমে জমিদারের কাছে, পরে কাল্পনিক মন্দিরের পুরোহিতের কাছে দুঃখ নিবেদন করা অথবা একই ব্যক্তির দর্শকের সামনেই সামান্য বেশ বদলে জমিদার ও পুরোহিতের অভিনয় শম্ভু মিত্রকে নতুন নাট্যশৈলীর ধারণা দেয়। (৪) জাপানি কাবুকি থিয়েটার সম্বন্ধে রুশ চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখা পড়ে জাপানি থিয়েটারের ভঙ্গি সম্পর্কে জেনেছেন। সেখানে বিভিন্ন আকারের দুর্গদ্বারের মাধ্যমে পরিপার্শ্বিক রচনা, কল্পিত যুদ্ধ ও অঙ্গভঙ্গি করে মৃত্যুর দৃশ্য রচনা নাট্যকারকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত