--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

বাঙালির চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। [২০১৬]

[উ] ভূমিকা—বাংলার শিল্পকলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে। এই পরিবারের যে কয়েকজন সদস্য চিত্রচর্চায় সুনাম অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক তথা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পথপ্রদর্শক।

চিত্রচর্চা—আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলাচর্চার পুরোধা হলেন অবনীন্দ্রনাথ। পাশ্চাত্য চিত্ররীতির প্রতি আকর্ষণে তিনি বহু খ্যাতনামা শিল্পীর কাছে বিবিধ চিত্ররীতির শিক্ষাগ্রহণ করেন। শিল্পচর্চার প্রথম পর্যায়ে বিদেশি শিল্পীদের কাছে ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং, জলরং বিবিধ মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন শেখেন। এরপর আইরিশ ইল্যুমিনেশন ও মুঘল মিনিয়েচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ফলে তাঁর শিল্পীসত্তায় দোলাচলতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে বৈষ্ণব পদাবলিকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিনি আত্মবিকাশের পথ খুঁজে পান। ‘বাগীশ্বরী প্রবন্ধাবলী’ তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য শিল্পগ্রন্থ।

চিত্ররীতির বৈশিষ্ট্য—(১) জলরঙে ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাঁর শিল্পচর্চার দক্ষতা। এই ‘ওয়াশ’ পদ্ধতি জাপানি চিতৃতির মত নয়। (২) তাঁর ছবির মূল প্রাণশক্তি ছিল অনুভূতিগ্রাহ্যতা। (৩) তাঁর ছবিতে রয়েছে মুঘল মিনিয়েচরের প্রভাব। (৪) বারবার রঙ ধুয়ে ফেলতেন বলে, তাঁর ছবিতে রঙের চরিত্র হয়ে উঠল মৃদু ও পেলব। (৫) চিত্রচর্চায় ভারতের ধ্রুপদি ও পৌরাণিক অতীতের প্রতি ঝোঁক।

উল্লেখযোগ্য চিত্রকলা—বৈষ্ণব পদাবলিকেন্দ্রিক বিখ্যাত চিত্র ‘শ্বেত অভিসারিকা’-র শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা পাশাপাশি ‘কৃষ্ণলীলা সিরিজ’, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘ভারতমাতা’, ‘অন্তিম শয্যায় শাহজাহান’, ‘অশোকের রাণি’, ‘দেবদাসী’ প্রভৃতি চিত্রগুলিও তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত