বুড়িকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সূচনা হয়েছিল তার পরিচয় দাও। বুড়ি পুনরায় বেঁচে ওঠার মাধ্যমে কী শিক্ষা দিয়েছিল তা লেখ।

[উ] প্রথম অংশ

বিশিষ্ট ছোটোগল্পকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের অবতারণা করেছেন। কিন্তু গল্পে এক থুথুড়ে বুড়ির মৃত্যু হয়েছে অনুমান করে তাকে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসা হয়।

          বলাবাহুল্য, হিন্দু লোকজন সকালে এই মৃতদেহ ফেলে আসে এবং বিকেলে মুসলমানপাড়ার মানুষজন আবার তাকে বাজারে ফিরিয়ে এনে দাবি করে সে মুসলমান। বুড়ির মৃতকল্প দেহকে নিয়ে এরপর বাজারে প্রবল উত্তেজনা ও যুক্তি-প্রতিযুক্তির চাপানউতোর শুরু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যারা চা-দোকানে জড়ো হয়েছিল তারাই তখন একদিকে মোল্লাসাহেব এবং অন্যদিকে ভটচাজমশাইকে নিয়ে বুড়ির মৃতদেহ অধিকারে সচেষ্ট হয়। বুড়ি ধর্ম পরিচয় প্রমাণে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে তাদের মিথ্যেকথা। লেখক এখানে ভারতের ধর্মীয় সংকীর্ণতার রূপটিকে উন্মোচিত করেছেন।

          মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাই যে উত্তেজনার পত্তন করেন, তা ক্রমে ধর্মীয় মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তারপর দেখা যায় লোকেরা বুড়ির মড়াবাঁধা চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি করছে, মানুষের হাতে উঠে এসেছে মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র। একসময় দেখা যায় মোল্লাসাহেব এবং ভটচাজমশাই নিজ নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের উত্তেজিত করে তুলছেন। এবং এই ধুন্ধুমার গর্জন-প্রতিগর্জনের মধ্যে দাঁড়িয়ে সরকারি প্রতিনিধি চৌকিদার অবস্থা সামাল দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয় অংশ

‘ভারতবর্ষ’ গল্পে গ্রামের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাইকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষ যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, লেখক তার কোনো সমাধান করেন না। গ্রামের মানুষ বুড়ির মানবিক পরিচয়ের আগে তার ধর্মীয় পরিচয় অনুসন্ধানে যেভাবে ব্যগ্র হয়ে ওঠে তাতে মানবিকতার অবনমন ঘটে। লেখক বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বুড়ির প্রতিক্রিয়া দেখান। যেন বুড়ি ধর্মীয় অসাড়তাকে দু’পায়ে মাড়িয়ে দূরে মিলিয়ে যায়। এভাবেই গল্পে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের বাতাবরণে লেখক শেষপর্যন্ত মানবতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত