“শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল।“—কার কথা বলা হয়েছে? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন? [২০১৫]

[উ] উদ্দিষ্ট ব্যক্তি—

উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। শেষ রোদের আলোয় যার দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে হলো আলোচ্য গল্পের নাম-ধর্মপরিচয়হীন এক থুত্থুড়ে বুড়ি।

ক্তব্য—

গল্প-শেষের উদ্ধৃতিটি নিঃসন্দেহে ব্যঞ্জনাময়। গল্পের কাহিনিবিন্যাসে দেখি রাঢ়বঙ্গের শীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এক থুত্থুড়ে বুড়ি বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। তারপর ‘ফাঁপি’র প্রবলতার মধ্যেই বট গাছের খোঁদলে রাত্রিযাপন করে। এরপর মেঘমুক্ত সকালে সেখানে নিথর বুড়িকে দেখে লোকজন অনুমান করে নেয় যে সে মৃতা। এই কল্পমৃত্যুর পটভূমিতেই লেখক আনয়ন করেন ভারতের পারস্পরিক ধর্মদ্বন্দ্বে উৎসুক মানুষজনদের। হিন্দু-মুসলমান একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, দ্বন্দ্বযুদ্ধে মেতে ওঠে।

দ্বন্দ্ব যখন চরম সীমায় পৌঁছেছে তখনই লেখক বুড়িকে পুনর্জাগরিত করেন। শুধু তাই নয়—দুই লড়াকু সম্প্রদায়ের নির্বোধ মানুষজনদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসার উপর নির্ভীক বুড়ির চলে যাওয়া দেখান। এর মধ্যে দিয়ে লেখক প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অসারতার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা ছুঁড়ে দিয়েছেন লেখক। মানুষ মানবতা ধারণ করুক—এই লেখকের প্রত্যাশা। তথাকথিত ধার্মিকজন জীবিত, বিপন্ন মানুষকে বাঁচার প্রেরণা দেয় না। কিন্তু মৃত মানুষের ধর্মপ্রমাণে সশস্ত্র হয়ে  লড়াই করে। তাই বুড়ির ‘দূরের দিকে ক্রমশ আবছা’ হয়ে যাওয়া যেন মানুষের মানবিক সত্তার, নৈতিকতার অবনমনকেই উপস্থাপিত করে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত