‘বচসা বেড়ে গেল’ – বচসার কারণ কী? এই বচসা কীভাবে সমাপ্ত হয়েছিল তার বিবরণ দাও। [অথবা] ‘দেখতে দেখতে প্রচন্ড উত্তেজনা ছড়াল চারিদিকে’—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য ঘটনার বিবরণ দাও।

[উ] প্রথম অংশ

উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পের কাহিনিতে পৌষের এক অকাল দুর্যোগের দিনে চা-দোকানে আড্ডার পরিবেশে আসে এক থুথুড়ে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি। রাতে সে আশ্রয় নেয় এক বট গাছের তলায়, গাছের কোটরে।

দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরের দিন গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করে বুড়ির নিঃসাড় দেহ এবং সকলে ভেবে নেয় যে সে মৃত। তার দেহকে হিন্দুরা চৌকিদারের পরামর্শে, বাঁশের চ্যাংদোলায় করে নদীর শুকনো চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। ওইদিনই বিকেলে কিছু মুসলমান ওই একই চ্যাংদোলায় দেহটিকে আবার বাজারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাদের বক্তব্য বুড়ি মুসলমান, তাকে কবর দিতে হবে। এই নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বেধে যায়।

দ্বিতীয় অংশ

বুড়ির ধর্ম-পরিচয় বিষয়ে নানা সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির হতে থাকে। অনেকেই জানায়, বুড়ি বিড়বিড় করে ‘আল্লা’ বা ‘বিসমিল্লা’ বলছিল। খোদ গাঁয়ের মোল্লাসাহেব অকাট্য শপথে বলেন, ভোরের নমাজ সেরে তিনি যখন বাস ধরতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বুড়িকে স্পষ্ট কলমা পড়তে শুনেছেন। ব্যাপারটিকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ভটচাজমশাই বলেন– তিনিও ওই একই সময়ে বাস ধরতে যাওয়ার পথে বুড়িকে স্পষ্ট বলতে শুনেছেন, ‘শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি”। মোল্লাসাহেবের সপক্ষে সাক্ষ্য দিতে ফজলু সেখ বলে– “আমি স্বকর্ণে শুনেছি, বুড়ি লাইলাহা ইল্লাল্ল বলছে!” আর ভটচাজমশায়ের সপক্ষে নকড়ি নাপিত দিব্যি করে বলে— “আপন মনে বলছে ‘হরিবোল, হরিবোল!” এরপর নিবারণ বাগদি যদি চেঁচিয়ে বলে ‘মিথ্যে’, তো করিম ফরাজি আরও চেঁচিয়ে বলে ‘খবরদার’। পরিষ্কার বোঝা যায় বুড়ির আপাত-মৃতদেহ দখল নিয়ে নিজ নিজ ধর্মের মানুষ দ্বন্দ্বে মেতে উঠেছে।

ক্রমে বচসা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। উত্তেজনাপুর্ণ পরিবেশে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হতে থাকে ক্রমশ। দুই সশস্ত্র জনতার মাঝে চৌকিদার নিজেকে বিপন্নবোধ করে। অবশেষে মৃতকল্প বুড়ি উঠে বসলে জনতা অবাক হয়ে যায়। বৃদ্ধার কথায় জনতা বুঝতে পারে সাম্প্রদায়িক ধর্মই নয়, মানবধর্মই বড়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত