“বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।“—বুড়ির চেহারা ও পোশাকের পরিচয় দাও। তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী ? [২০১৭]

[উ] প্রথম অংশের উত্তর

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে আমরা যে বুড়ি চরিত্রটিকে পাই সে ছিল থুত্থুড়ে, কুঁজো, ভিখিরি। রাক্ষুসি তার চেহারা এবং একমাথা সাদা চুল। পরনে ছেঁড়া, নোংরা কাপড়; গায়ে তেলচিটে তুলোর কম্বল জড়ানো। হাতে বেঁটে লাঠি নিয়ে পিচের পথে ভিজতে ভিজতে বুড়ি দিব্যি একই তালে হেঁটে হেঁটে চা-দোকানে উপস্থিত হয়েছিল। অপরিচিত বুড়ির মুখ ক্ষয়ে গিয়ে বিকৃত হয়ে গেছে। সে মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন ফুটে উঠেছে। সকলে এই দুর্যোগে তার বেঁচেবর্তে থাকা নিয়ে যখন বিস্মিত তখনই বুড়ি চা-দোকানে ঢুকে চা চায়।

দ্বিতীয় অংশের উত্তর

শীতকালের ‘পউষে বাদলা’র বৃষ্টি  বন্ধ হয়ে যেদিন আকাশ পরিষ্কার হয়, সেদিন গ্রামবাসীরা বুড়ির নিঃসাড় দেহ আবিষ্কার করে। তারা বটতলার খোঁদলে বুড়িকে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। অনেকবেলা পর্যন্ত তাকে অনড় দেখে চা-ওয়ালা জগা বললে—“নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা।“

ক্রমে ভিড় বেড়ে যায়। কেউ ভাবে শেয়াল-কুকুরে ছিঁড়ে খাবে, গন্ধে টেকা যাবে না। কেউ কপাল ছুঁয়ে দেখে প্রচণ্ড ঠান্ডা, নাড়ির স্পন্দন নেই। গ্রামের চৌকিদার গ্রামবাসীদের পরামর্শ দেয়—“লদীতে ফেলে দিয়ে এসো। ঠিক গতি হয়ে যাবে-যা হবার!” বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মেনে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে বুড়ির দেহ ফেলে আসা হয় নদীর চড়ায়।

গল্পের এই অংশটি মানুষের অমানবিকতাকেই ফুটিয়ে তোলে। গ্রামবাসীরা বুড়ি মারা গেছে জেনেও তার দেহ সৎকার না করে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। মানুষের এই নির্দয় আচরণেই দেহ তপ্ত বালিতে পড়ে থাকে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত