ডাকাতের মা গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

 

একাদশ শ্রেণির সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া হলো

প্রশ্ন : ‘মা তখনো মেঝেতে পড়ে ডুকরে কাঁদছে’ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কাঁদার কারণ উল্লেখ করো

কথামুখ: ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ীর অন্যতম একটি গল্প হলোডাকাতের মাএই গল্পে সৌখীর মায়ের সামান্য ভুল সিদ্ধান্তে আনন্দ কিভাবে দুঃখে পরিণত হয় তার পরিচয় রয়েছে

প্রসঙ্গ: সৌখীর মা মাতাদিন পেশকারের বাড়ি থেকে লোটা চুরি করেছিলঅথচ সেই চুরির দায় পড়েছিল সৌখীর উপর।সৌখীকে দারোগা সাহেব ধরে নিয়ে যাবার সময় তার মায়ের অবস্থা প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করা হয়েছে

কাঁদার কারণ: দীর্ঘদিন পর সৌখী বাড়ি ফিরেছে ছেলেকে কী খাওয়াবে এই চিন্তায় সৌখির মাসারারাত চোখের দুটি পাতা এক করতে পারেনি ছেলের পছন্দের খাবার ছিলআলু চচ্চড়ি’, সে প্রসঙ্গে সৌখীর মায়ের ভাবনা এইরকম:

আলু, চাল, সরষের তেল সবই কিনতে হবেঅত পয়সা পাব কোথায়?”

এই চিন্তায় সৌখীর মা মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে একটি লোটা চুরি করে

          মাতাদিন পেশকারের সঙ্গে দারোগা পুলিশের গভীর সখ্যতার সম্পর্ক এই কারণে খুব তাড়াতাড়িই সৌখীর বাড়িতে পুলিশ হাজির হয় দারোগা সাহেবের প্রশ্নের জবাবে সৌখীর মা একটি কথাও বলতে পারে না শেষ পর্যন্ত সৌখী যখন মায়ের চুরির অপবাদ নিজের মাথায় নিল, তখন সৌখীর মা ডুকরে কেঁদে উঠেছিলদীর্ঘদিনের গর্ব এক মুহূর্তে যেন খান খান হয়ে যায়, যখন লোটা চুরির কলঙ্ক সৌখীর কাঁধে চাপেযে ছিঁচকে চোরদের সৌখীর মায়ের পছন্দ হয়না, সেই ছিঁচকে চুরির অপবাদেই সৌখীর জেল হবে জেনে মায়ের সমস্ত অহংকার ধূলিস্যাৎ হয়এই কারণেই দর্পচূর্ণের অবসানে সৌখীর মা কান্নায় ভেঙে পড়ে

 

প্রশ্ন : ‘ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে’ – কে ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে? কলঙ্ক শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী?

কথামুখ: ঔপন্যাসিক সতিনাথ ভাদুড়ীর অন্যতম একটি গল্প হলোডাকাতের মাএই গল্পে সৌখীর মায়ের সামান্য ভুল সিদ্ধান্তে আনন্দ কিভাবে দুঃখে পরিণত হয় তার পরিচয় রয়েছে

প্রথম অংশ: আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্রডাক্কাতের মাঅর্থাৎ সৌখীর মা তার ছেলে সৌখীর নামে কলঙ্ক এনেছে

দ্বিতীয় অংশ: বহুদিন পর পুত্র সৌখী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মায়ের সামনে উপস্থিত হয়সেই সময় সৌখীর মাআনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়কিন্তু পুত্রকে কখনোই নিজের দারিদ্র্যের কথা জানতে দেয়নি আবার জেলফেরত ছেলেকেআলু চচ্চড়িভাত খাওয়াতে তাকে ছিঁচকে চোরের মতো মর্যাদা হানিকর কাজেও হাত দিতে হয়েছিল

          চরম এক অসহায় মুহূর্তে সৌখীর মা বাধ্য হয়ে পেশকারের গৃহ থেকে পুরোনো একটি লোটা চুরি করেছিল সেটি চোদ্দ আনায় বিক্রিও করেছিলএই কলঙ্ক পরে ছেলের নামের সঙ্গে জড়িয়ে যায়

          ডাকাতের বউ, ডাকাতের মা বলে যার গর্ব ছিল, সেকিনা ছিঁচকে চোরের মতো হীন কাজ করে বসলোতার ফলে লজ্জায়, দুঃখে তার মাথা হেঁট হয়ে যায় এর আগে কখনোই দারোগা পুলিশের কাছে মাথা হেঁট করেনি তার চেয়েও বড়ো কষ্ট তার ছেলের উপর কলঙ্ক লেপন করাআর সেই বেদনায় সৌখীর মা বুক ভরা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল

 

প্রশ্ন : ‘এইবার সৌখীর মা ভেঙে পড়ল’ – কখন এবং কেন সে ভেঙে পড়েছিল?

কথাকার সতীনাথ ভাদুড়ীরডাকাতের মাগল্প থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে

প্রথম অংশ: সৌখীর মা পেশকার সাহেবের বাড়ি থেকে লোটা চুরি করার ফলে তার বাড়িতে দারোগা সাহেব এসেছিল সৌখীকে ধরতে এর ফলে সৌখীর নামে কলঙ্ক হওয়ায় সৌখীর মা ভেঙে পড়েছিল

দ্বিতীয় অংশ: বহুদিন পর সৌখী জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরবাড়িতে আসে, এইজন্য তার মা আনন্দে ভরপুর হয়ে ওঠে সৌখীর মায়ের অভাব সত্ত্বেও পরদিন ছেলেকে কী খেতে দেবে এইচিন্তায় তার মায়ের সারা ঘুম আসে না

          এইঅভাবঅনটনের মধ্যে তার মা সেই রাত্রে পেশকার সাহেবের বাড়ী থেকে লোটা চুরি করে সেই লোটাটিকে চোদ্দ আনায় বিক্রি করে এরফলে পরদিন সকালে সৌখীর বাড়িতে পুলিশ আসে সৌখীকে ধরতে ছেলের নামে কলঙ্ক আনাটা তার মায়ের কাছে শোক বার্তা বয়ে এনেছিল সৌখীর মাভাবছিল যে, শেষকালে ছিঁচকে চুরির অপরাধে কিনা জেলে যাবে এই সবের ফলে সৌখীর মা ভেঙে পড়েছিল

 

প্রশ্ন : ‘ওরা কি ডাকাত দলের যুগ্যি’ – কোন প্রসঙ্গে এই মন্তব্য? বক্তার একথা বলার কারণ বিশ্লেষণ কর

প্রসঙ্গ: নিজের স্বামী ছেলের চেহারা সম্পর্কে সচেতন গল্পের মূল চরিত্র সৌখীর মাস্বাস্থ্যহীন কালিঝুলি মাখা, রোগাপাতলা ছেলেকে দেখে এই মন্তব্য করেছে সৌখীর মা

একথা বলার কারণ কী: ডাকাতের মা হিসাবে সৌখীর মায়ের গর্ব ছিল তার দলের ছেলেরা অবশ্য শেষপর্যন্ত আনুগত্য স্বীকার করেনি তারা সৌখীর মাবউএরকথা একবারও ভাবেনি এদেরকে সৌখীর মা চিহ্নিত করেছেবদলোকবলে তার বক্তব্য

আসতে দাওনা সৌখীকে! দলের ওইবদলোক গুলোকে ঠান্ডা করতে হবে

প্রসঙ্গক্রমে সৌখীর মাআরো বলেছে, “এসব একলষেঁড়ে লোকদের দলে না নিলেই হয়

          সৌখীর মায়ের এইরকম সিদ্ধান্তের কারণ হলো

একএদের চেহারা ডাকাতের সঙ্গে মানানসই নয়

দুইদেখতে অনেকটা তালপাতার সেপাই

তিনরোগাপটকাকে দেখে কেউ ভয় পায় না

সুতারাং সৌখীর মায়ের সিদ্ধান্ত সৌখীর দলের লোকেরা কেউ ডাকাত দলের যোগ্য নয়

 

প্রশ্ন : জেল থেকে ফিরে আসার দিন রাত্রে সৌখীর সঙ্গে তার মায়ের যে কথোপকথন হয়েছে তা গল্পানুসরনে লেখ

ভূমিকা: সতীনাথ ভাদুড়িরডাকাতের মাগল্পে দেখা যায়, জেল থেকে সৌখীর ফিরে আসার দিন রাত্রে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল তার মাছেলের বাড়ির ফেরার আনন্দে তার মা অভিভূত তাদের দুজনের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল তা মাছেলের সম্পর্কের দিক তুলে ধরে

কথোপকথন: অনেক রাতে সৌখী বাড়ি ফিরেছিলমাকে সৌখী জানায়, হেড জমাদার সাহেবকে টাকা খাইয়ে সে ছাড়া পেয়েছে

          সৌখী দরকারের চাইতেও যেন বেশি জোরে কথা বলছিলকেননা সে তার পত্নী সন্তাকে খুঁজছিল ছেলের এই ঔৎসুক্য সম্পর্কে সৌখীর মা আগে থেকে জানতলেখক লিখেছেন—“প্রতি মুহূর্তে বুড়ি এই প্রশ্নেরই ভয়করছিল

          তার ভয়ের কারণ, সৌখী জানতে চেয়েছিলসে তার ছেলেবউকে দেখতে পাচ্ছে নাকেন? ছেলের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সৌখীর মাজানায়—“মেয়েদের কি মাবাপকে দেখতে ইচ্ছে করে না একবারও?”

          নাতি আর বউমার প্রসঙ্গ থেকে সৌখীর মা অন্য প্রসঙ্গে আসে সৌখীকে হাতমুখ ধুয়ে আসতে বলে সৌখী খেয়ে এসেছে জানালে সৌখীর মা প্রত্যুত্তরে জানায়, “খইমুড়ি আছে খেয়ে নেতুই যে কত খেয়ে এসেছিস, সে আর আমি জানিনে

এখানে সৌখীর মায়ের অপত্য স্নেহ ধরা পড়েনিজের কম্বলখানা মায়ের গায়ে জড়িয়ে দেয় সৌখী যদিও নতুন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েও ছেলেকে খাওয়ানোর চিন্তায় তার ঘুম আসে না

          সেরাতে এভাবে সৌখী আরতার মায়ের মধ্যে যেকথোপকথন হয়েছিল তা আন্তরিক   

 

প্রশ্ন : দারোগা পুলিশ দেখে বুড়ির বুক কেঁপে উঠল কেন?

ডাকাতের মাগল্পে সৌখীর মা বেশ সাহসী ছিল। তার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে তার বেশ গর্ব ছিল। তার দুটি পরিচয়

এক) সে ডাকাতের বউ

দুই) সে ডাকাতের মা

সুতরাং, তার ভয় ছিল না। জীবনে বহু ঘটনার সাক্ষী সে। পুলিশ-দারোগা নিয়ে তার কোনো ভীতিবোধ নেই। তার স্বামীকে সবাই মান্য করত। কিন্তু মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে লোটা চুরি করাটা গর্বের বিষয় ছিল না।

     তাই বাসনওয়ালা, পেশকার সাহেব ও দারোগাকে দেখে সৌখীর মায়ের বুক কেঁপে উঠেছিল। সতীনাথ লিখেছেন

পুলিশ দেখে ভয় পাবার লোক সে নয়। এর আগে কতবার সময়ে অসময়ে পুলিশকে তাদের বাড়ি হানা দিতে দেখেছে

কিন্তু এবার তার ভয়ের কারণ অন্য। ডাকাতি করা তার স্বামীপুত্রের জীবিকা। এই জীবিকা নিয়ে তার কোনো আফশোস নেই। কেননা

প্ৰথমত। স্বামী-পুত্রের কাজ মরদের কাজ

দ্বিতীয়ত। সে কাজ নিঃসন্দেহে গর্বের কাজ।

কিন্তু সৌখীর মা ছিঁচকে চোরের কাজ করেছে। সৌখী কি ভাববেসেই চিন্তায় তার মা ভয় পেয়েছিল।

 

প্রশ্ন ৭: আগে সে ছিল ডাকাতের বউ। …তার পরিচয় ডাকাতের মা বলে।‘’ –‘ডাকাতের বউকীভাবে ডাকাতের মা’-এ পরিণত হয়েছে, তা দেখাও।

ডাকাতের বউয়ের ডাকাতের মা’-এ রূপান্তর: নিম্নবর্গের প্রাত্যহিক দিনযাপনের চিত্র অঙ্কনে ক্লান্তিহীন সতীনাথের ডাকাতের মাগল্পটি নানা কারণে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য।

          সতীনাথ ভাদুড়ী সৌখীর মায়ের চরিত্র অঙ্কনে প্রথমেই তার পাঠককে বলে দিয়েছেন, এই চরিত্রটির একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে

আগে সে ছিল ডাকাতের বউ। সৌখীর বাপ মরে যাবার পর থেকে তার পরিচয় ডাকাতের মা বলে

এরপরেই সৌখীর মায়ের কার্যকলাপ বর্ণিত হয়েছে। কীভাবে সে পুলিশের সঙ্গে মোকাবিলা করে, কীভাবেই বা দলের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে, সে বিষয়গুলি লেখক নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন।

স্বামী ও সন্তানের কর্মের সঙ্গে তার জীবন একই সূত্রে বাঁধা পড়েছে। তাই একটা অনুশোচনাবোধ ও আশঙ্কা সবসময় তার মনের মধ্যে লালিত হতে থাকে। সতীনাথ লিখেছেন

ঝি-চাকরের কাজও তো আমরা করতে পারি না। করলেই বা রাখতে কে? সৌখীর মা-বউকে কেউ বিশ্বাস পায়!

অনেকদিন পর ছেলে বাড়ি ফেরার আনন্দে মায়ের বুকের মধ্যে যেভাবে তোলপাড় করে সেই বোধের বিশ্লেষণে সতীনাথ লিখেছেন

বুড়ি ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে।…এ ছেলে বুড়ো হয়েও সেই একইরকম থেকে গেল।…এই আনন্দ আর রাখবার জায়গা নেই

সতীনাথ অবশ্য এই চরিত্রের বিবর্তন দেখালেন। বৃদ্ধা মা ছেলেকে খাওয়ানোর চিন্তায় সারারাত দুটি চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তার মাথার মধ্যে সর্বক্ষণ ঘুরেছে একটাই মাত্র প্রশ্ন— “সৌখীকে কী খেতে দেবে কাল সকালে সেই হয়েছে বুড়ির মস্ত ভাবনা

          আর সেই ভাবনা থেকে মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে সে চুরি করেছে বহুপ্রাচীন একটি লোটা। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি। সৌখীর কথানুসারে দারোগা যখন সৌখীকে পুনরায় জেলখানার উদ্দেশ্যে নিয়ে চলে সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি বর্ণনায় সতীনাথ লিখেছেন

মা তখনও মেঝেতে পরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। উনোনে চড়ানো আলুর তরকারির পোড়া গন্ধ সারা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে

বস্তুত ডাকাতের মাগল্পের সৌখীর মা ডাকাতের বউ থেকে ডাকাতের মা-এ পরিণত হয়েছে।

 

প্রশ্ন ৮: ‘তার বাড়ি ফিরবার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে মুহূর্তের মধ্যে।‘ —এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কোন্ প্রসঙ্গে বক্তব্যটি করা হয়েছে? ‘বাড়ি ফিরবার আনন্দকেন অর্ধেক হয়ে গিয়েছেবলে লেখক জানিয়েছেন?

১) যার কথা বলা হয়েছে:ডাকাতের মানামাঙ্কিত বহুখ্যাত গল্পের থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। এখানে সৌখীর কথা বলা হয়েছে।

২) প্রসঙ্গ: দীর্ঘদিন কারাবরণের পর সৌখী যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন স্ত্রী ও শিশুপুত্রটিকে না দেখতে পেয়ে তার মনের অবস্থা বর্ণনায় লেখক এই উক্তিটি করেছেন।

৩) আনন্দ অর্ধেক হওয়ার কারণ: সতীনাথ ভাদুড়ীর মধ্যে ছিল সর্বব্যাপী ও সুগভীর অস্তদৃষ্টি। ডাকাতের মানামাঙ্কিত গল্পে এক বিশেষ আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে একজন যুবকের বিপদগামী হওয়ার আখ্যান লিখেছেন সতীনাথ

          জীবনের বেশিরভাগ সময় সে অন্ধকারের মধ্যে দিন যাপন করেছে। সতীনাথ লিখেছেন

সৌখী জেলে গিয়েছে আজ পাঁচ বছর; … সৌখীরও তো এর আগে দুবার কয়েদ হয়েছে

অর্থাৎ কারাগারে থাকাই যেন তার নিত্য রুটিন।

          দীর্ঘদিন পর সৌখী যখন বাড়ি ফিরেছিল তখন পত্নী ও পুত্রকে না দেখে তার বাড়ি ফেরার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে তার নিজস্ব ভালোলাগার একটি জগৎ। যতই বিপর্যয় আসুক না কেন মানুষ বেঁচে থাকে একটুকরো স্বপ্ন নিয়ে।

          ভাগ্যহীন সৌখীর মধ্যেও সেই স্বপ্নটুকু ছিল। ঘটনা চক্রে সে ডাকাত হলেও এবং দারিদ্র্য তাদের পরিবারে নিত্য সহচর হলেও মানবিক বোধবুদ্ধির বিলুপ্তি ঘটেনি। তাই দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে তার দুচোখ খুঁজতে থাকে অন্তরঙ্গ মানুষজনদের

          সৌখীর মা জানত তার ছেলে নিঃসন্দেহে জানতে চাইবে ছেলে বউয়ের কথা। ঘটনাচক্রে দেখা যায় কথা প্রসঙ্গে সৌখী তার মাকে প্রশ্ন করেছে তার বউ হঠাৎ বাপের বাড়ি কেন? সতীনাথ লিখেছেন

ছেলে ছেলে করে মরে সৌখী। …শরীর খারাপের কথা শুনলে হয়তো সৌখী এখানে আর একদিনও থাকবে না

এতদিন পর বাড়ি ফিরে ছেলে ও বউয়ের মুখ না দেখে সৌখীর বাড়ি ফেরার আনন্দ মুহূর্তেই কর্পূরের মতো উে যায়। আন্তর্মানবিক সম্পর্কগুলি কীভাবে আমাদের মনের মধ্যে ফল্গুধারার মতো ক্রিয়াশীল থাকে, তা দেখিয়েছেন সতীনাথ ভাদুড়ী।

 

প্রশ্ন ৯: এতক্ষণে বোঝে সৌখী ব্যাপারটা।‘—কোন্ ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে? সে কীভাবে এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, তা আলোচনা করো।

১) কোন্ ব্যাপার: আধুনিক আর্থসামাজিক বাস্তব ভারতের প্রেক্ষাপটে লেখা সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মাগল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। দারোগার সামনে চুরির ঘটনা বিষয়ে একটিও বাক্য ব্যয় করার সাহস দেখায়নি। সৌখী বুঝতে পেরেছিল, তার মা যে কর্মটি করেছে, তা নিঃসন্দেহে গর্হিত কর্ম। সেই প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

২) ব্যাপারটি অনুধাবন: সাংসরিক অভাব অনটন যখন চরম পর্যায়ে উঠেছিল তখন পুত্রবধূ ও নাতিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে মুথাঘাসের মতো কোনোভাবে টিকেছিল সৌখীর মা। ছেলে বাড়ি ফেরায় আনন্দের সঙ্গে বিষাদও সৌখীর মার মন জুড়ে ছিল।

          কী খাওয়াবে ছেলেকে?–সেই চিন্তায় অস্থির সৌখীর মা সারারাত চোখের দুটি পাতা এক করতে পারে না। ছেলের পছন্দের খাবার ছিল আলু চচ্চড়ি। সেই প্রসঙ্গে সতীনাথ লেখেন

আলু, চাল, সরষের তেল সবই কিনতে হবে। অত পয়সা পাবে কোথায়?”

এই চিন্তায় অস্থির থেকে সৌখীর মা মাতাদীন পেশকারের বাড়ি থেকে একটি লোটা চুরি করে।

          ঘটনাচক্রে মাতাদীন সেই লোটা কেনার জন্যে বাসনের দোকানে গিয়ে উপস্থিত হলে গল্পের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। সমস্ত সম্ভ্রমের নিষেধ অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র সন্তানের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে সৌখীর মা চৌর্যবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছিল।

          মাতাদীন পেশকারের সঙ্গে দারোগা-পুলিশের গভীর সখ্যতার সম্পর্ক। ফলে তারা একসঙ্গে গিয়ে হাজির হয় সৌখীর বাড়িতে। দারোগাসাহেবের প্রশ্নের জবাবে সৌখীর মা একটি কথাও বলতে পারে না। ধূর্ত ও মতলবী দারোগার সামনে মায়ের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি সম্পর্কে সতীনাথ লেখেন

কোনো জবাব বেরুল না বুড়ির মুখ দিয়ে। শুধু একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে সে মাথা হেঁট করে

সৌখী এই সত্য অনুধাবন করে যে, তার মা গত রাতে লোটা চুরি করেছে। সে ডাকাত হলেও তার মাকে নিয়ে তার একটি বিশ্বাসের জগৎ, গর্বের জায়গা ছিলতা কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে খান খান হয়ে যায়।

 

প্রশ্ন ১০: প্রতি মুহূর্তে বুড়ি এই প্রশ্নের ভয়ই করছিল?’– ‘বুড়িবলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার ভয়ের কারণ কী ছিল?

(১) সতীনাথ ভাদুড়ী প্রণীত ডাকাতের মাগল্পে বুড়িবলতে সৌখীর মায়ের কথা বলা হয়েছে।

(২) সৌখী দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বাড়ি ফিরেছে। সঙ্গতই তার চোখ ছেলে ও বউকে খুঁজতে থাকবে। এদের কাউকে দেখতে পায়নি। মায়ের কাছে তাই সৌখী জানতে চেয়েছিল—“এদের কাউকে দেখছি না?” সেই প্রসঙ্গে সৌখীর মায়ের অবস্থা নির্ণয়ে এই বক্তব্য উঠে এসেছে।

          সৌখী জেলে যাওয়ার পর তার দলের ছেলেরা প্রথমে সাহায্য করত। কিন্তু পরে সৌখীর মায়ের কোনো খবর তারা নেয়নি। এর কারণ বিশ্লেষণে সৌখীর মায়ের মনে হয়েছে—“দিনকাল পড়েছে অন্যরকম!নাতি ও বউয়ের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সাধ্য সৌখীর মায়ের নেই। রুগ্ন বউকে বাড়িতে রেখেও দেওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে তাদের পাঠিয়ে দেয়।

          ছেলে বাড়ি ফিরে প্রথমে বউ ও বাচ্চার মুখ দেখতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই সৌখী যখন তার সন্তান ও পত্নীর কথা বলে, তখন তার মা রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় ৷


একাদশ শ্রেণির অন্যান্য প্রশ্ন দেখুন



error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত