‘বনগতা গুহা অবলম্বনে অলিপর্বার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

[ভূমিকা] শ্রীগোবিন্দকৃষ্ণ মোদক বিরচিত ‘চোরচত্বারিংশীকথা’ গ্রন্থের প্রথমভাগ ‘বনগতা গুহা’ পাঠ্যাংশের মূল চরিত্র হলো অলিপর্বা। এই রচনায় অলিপর্বার জীবনের নানাদিক উঠে এসেছে।

[দরিদ্রতা] দারিদ্র্য অলিপর্বার জীবনের নিত্যসঙ্গী। তাঁর পিতার বিশেষ কোনো ধনসম্পদ ছিল না, আবার দুর্ভাগ্যবশত অলিপর্বা গরিব পরিবারে বিবাহ করবার ফলে অনেক কষ্টে দিনযাপন করত। সে প্রতিদিন ভোরে তার তিনটি গাধা নিয়ে চলে যেত বনে। বন থেকে কাঠ কেটে, নগরে তা বেচে অলিপর্বা জীবিকা নির্বাহ করতো অর্থাৎ এভাবেই সে তার সংসার চালাতো।

[ধৈর্য ও সাহসিকতা] দস্যু দলকে দেখে অলিপর্বা একটুও ভয় না পেয়ে অসামান্য ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের কার্যকলাপ লক্ষ করেছিল। এমনকি দস্যুরা চলে যাওয়ার পরেও সে গাছ থেকে নামেনি। এতে তার উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

[প্রবল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন] গুহার দরজা খোলা এবং বন্ধ করা—এই দুইবার মাত্র মন্ত্র শুনে মনে মনে কয়েকবার আবৃত্তি করে সে মুখস্থ করে ফেলেছিল। এ থেকে বোঝা যায়, অলিপর্বা প্রবল স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিল।

[লোভহীনতা] গরিব হলেও অলিপর্বা গুহার মধ্যে সোনারুপোর অজস্র অলংকার, রত্ন, ভোজ্যবস্তু, রেশমের বস্ত্র দেখেও লোভী ব্যক্তির মতো আচরণ করেনি। তার তিনটি গাধার বহন ক্ষমতা অনুযায়ী ধনসম্পদ সে বস্তাবন্দী করেছিল এবং তা গৃহে নিয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত লোভ তাকে পেয়ে বসেনি। একারণে সুস্থ সবলভাবে গৃহে ফিরতে পেরেছিল।

[কৌতূহলপরায়ণ ও ঈশ্বরবিশ্বাসী] গাছ থেকে বনদস্যুদের কার্কলাপ দেখে অলিপর্বা কৌতূহলী হয়ে পড়েছিল। তাই প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সে গুহার মধ্যে প্রবেশ করেছিল। আবার দস্যুদের ক্রিয়াকলাপ সম্বন্ধে সত্য জানতে অলিপর্বা ভাগ্যের উপর সমস্ত বিষয় ছেড়ে দিয়ে গুহার কাছে গিয়েছিল।

[মূল্যায়ন] অলিপর্বার চরিত্রের মধ্যে লক্ষ করা যায় যে—অনেক কষ্ট স্বীকার করেও সংসারে বেঁচে থাকা যায়। সৎ পথে জীবনযাপন করলে ঈশ্বর সহায় হন। এককথায় অলিপর্বা একজন সৎ এবং নির্ভীক মানুষ।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত