বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো। [২০১৭]

[উ] ভূমিকা

= ঋত্বিক কুমার ঘটক(১৯২৫—১৯৭৬), যিনি ঋত্বিক ঘটক হিসেবেই সচরাচর অভিহিত। তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের সাথে তুলনীয়।

চলচ্চিত্রে অবদান

মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত ছবিতে বামপন্থা ও মানবতার প্রকাশ ঘটে। তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগরিক’ (১৯৫২) নিম্নমধ্যবিত্তের অসহায়তার ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মধ্যবিত্তের জীবনযন্ত্রণার প্রকাশ এ ছবি। এটি প্রথম নির্মিত ছবি হলেও মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় কিন্তু প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অযান্ত্রিক’ যন্ত্র-মানব সম্পর্কের আশ্চর্য রূপকথা। এটি ঋত্বিক ঘটকের শ্রেষ্ঠ ছবি।

উদ্বাস্তু সমস্যা, আধুনিক জীবনে পাপের প্রতি ঘৃণা, আর পুনর্বাসনের লড়াইয়ে ক্ষতবিক্ষত মানুষ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রটির বিষয়। ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২) দেশভাগের যন্ত্রণার সার্থক প্রকাশ। ১৯৭০ সালে তৈরি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ তার এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। সত্তর দশকের সমাজ ও মানুষের প্রতিরূপ ‘যুক্তি-তক্কো-গপ্পো’ (১৯৭৭)। এ ছাড়া ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৯) চলচ্চিত্র এবং ‘ফিয়ার’, ‘ছৌ’, ‘আমার লেনিন’ ইত্যাদি গোটা দশেক তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেন তিনি।

বাংলাদেশের পটবদলকে অগণিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তিনি বেছে নেন চলচ্চিত্র মাধ্যমকে। দেশভাগজনিত ট্র্যাজেডি বাঙালি জীবনের স্থায়ী যন্ত্রণা এবং এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট বাঙালির সার্থক রূপকার ঋত্বিক ঘটক।

চলচ্চিত্র =

ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ—নাগরিক, অযান্ত্রিক, বাড়ী থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা, তিতাস একটি নদীর নাম, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো। শর্টফিল্ম ও তথ্যচিত্রের তালিকা—দ্য লাইফ অফ দ্য আদিবাসিজ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, আমার লেলিন, পুরুলিয়ার ছৌ প্রভৃতি।

পুরস্কার ও সম্মাননা =

১৯৭০ সালে ভারত সরকার তাকে শিল্পকলায় পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘হীরের প্রজাপতি’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত