বাংলা সিনেমার জন্মলগ্ন ও হীলালাল সেন
বাংলা সিনেমার সূচনা হয়েছিল নির্বাক সিনেমার মাধ্যমে। ভারতীয় সিনেমার সূচনায় যাঁর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তিনি হলে হীরালাল সেন এবং তাঁর ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’। ১৮৯৮ সালে হীরালাল সেন ও তাঁর ভাই মতিলাল সেন এই কোম্পানিটি গড়ে তোলেন। বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়াও হীরালাল সেন কয়েকটি ছবি ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তথ্যচিত্র দুটি হলো—দিল্লি দরবার এবং স্বদেশি ও বঙ্গভঙ্গ বিষয়ক। ১৯১৩ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার গ্রামে গ্রামে বায়োস্কোপ দেখিয়ে গিয়েছিল।
ম্যাডান থিয়েটার ও নির্বাক যুগ
জে. এফ. ম্যাডান প্রতিষ্ঠিত ‘ম্যাডান থিয়েটার’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিনেমা দেখাতে শুরু করেন। এই থয়েটারে প্রথম হিন্দি ছবি ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ এবং এঁদের প্রযোজিত বাংলা ছবি ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’ দেখানো হয়েছিল। প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’ এই কোম্পানি উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। মোট ৬২টি ছবি এঁদের প্রযোজনায় তৈরি হয়। এককথায় ম্যাডান থিয়েটার সমস্ত দিক দিয়ে সফল হয়েছিল।বাংলা সিনেমায় এঁদের অবদান অবশ্য স্মরণীয়।
অন্যান্য
বায়োস্কোপ প্রদর্শনী এবং প্রযোজনায় নির্বাক যুগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি ছিল—ধীরেন গাঙ্গুলির ‘ইন্দো-ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি’, শিশির কুমার ভাদুড়ীর ‘তাজমহল ফিল্ম কোম্পানি’, অনাদি বসুর ‘অরোরা ফিল্ম কোম্পানি’ প্রভৃতি। নির্বাক যুগের সিনেমার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি হলেন—হীরালাল সেন, প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি, ধীরেন গাঙ্গুলি, শিশিরকুমার ভাদুড়ি, জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনাদি বসু প্রমুখ।
নির্বাক যুগের সিনেমার বিশিষ্টতা
(ক) পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি প্রেম ও মানবিকতা—নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের বিষয় ছিল। (খ) এই সময়ে বাংলা নাটকের সঙ্গে চলচ্চিত্রের গভীর যোগসূত্র গড়ে ওঠে। নাটকের কাহিনিই শুধু নয়, নাটকের পরিচালকরাও বাংলা সিনেমায় যোগ দিয়েছিলেন। (গ) নির্বাক যুগের সিনেমা ছিল বিনোদনকেন্দ্রিক, সমকালীন রাজনীতির কোনো প্রভাব সিনেমায় দেখা যায় না। (ঘ) এইসময়ে জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যায়।