বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘নিউ থিয়েটার্স’-এর অবদান আলোচনা করো।

[উ] সম্পূর্ণভাবে বাঙালির উদ্যোগে বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণক্ষেত্রটি তৈরি হয় বীরেন্দ্রনাথ সরকারের ‘নিউ থিয়েটার্স’ প্রতিষ্ঠার (১৯৩১ খ্রি.) মধ্যে দিয়ে। সবাক যুগের সূচনার দিকে নিউ থিয়েটার্স-এর উদ্যোগে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ বাঁক নিয়েছিল।

নিউ থিয়েটার্সের কলাকুশলী

নিউ থিয়েটার্সের সূচনালগ্নে চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে একদল প্রতিভাবান মানুষ একত্রিত হয়েছিল। চিত্র পরিচালনায় দেবকী কুমার বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, ক্যামেরায় নীতিন বসু, শব্দ প্রকৌশলে মুকুল বসু, গানে রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ মল্লিক, শচীনদেব বর্মণ, কমল দাশগুপ্ত, অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনাকে সমৃদ্ধ করেছিল। অভিনয়ে ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী স্যান্যাল, কানন দেবী প্রমুখ উল্লেখ্য।

প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নরেন্দ্র দেব, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের বীরেন্দ্রনাথ সরকার সিনেমা নির্মাণে নিয়ে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এইসমস্ত মানুষদের বহুবিধ চিন্তা তিরিশের দশকে বাংলা সিনেমায় বৈচিত্র্য নিয়ে আসে।

নিউ থিয়েটার্সের অবদান

নিউ থিয়েটার্সের ভারতজোড়া খ্যাতির পিছনে ছিলেন দেবকী কুমার বসু। তাঁর পরিচালিত ‘চন্ডীদাস’ সেসময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাঁর পরিচালনায় নিউ থিয়েটার্সের প্রযোজনায় ‘বিদ্যাপতি’ চলচ্চিত্রায়ণে যথাযথ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রয়োগ করা হয়। বীরেন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘নটীর পূজা’ নাটককে চলচ্চিত্রায়িত করেন।   প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর ‘দেনাপাওনা’, ‘কপালকুন্ডলা’, নরেশচন্দ্র মিত্রের ‘নৌকাডুবি’, প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’, ‘মুক্তি’ ইত্যাদি ছবিগুলি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘মুক্তি’ ছবির অভিনেত্রী কানন দেবী অভিনয়ের জন্য পরপর দু’বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পান।

[] ম্যাডান কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিল ‘নিউ থিয়েটার্স’। এবং পরবর্তী কয়েক দশকের সিনেমায় এই থিয়েটার্সের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত