[মান—৪] মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

[] মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের সময়কাল

সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, ভারতীয় সমাজে ব্রিটিশ শাসনকালে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটেছিল। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, ব্রিটিশ শাসনকালের পূর্বেই ভারতীয় সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান শুরু হয়েছিল। যেমন—ইকতিদার আলম খান তাঁর ‘দ্য মিডল ক্লাসেস ইন দ্য মোগল এম্পায়ার’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, মোগল আমলে সরকারি কর্মচারী, উকিল, শিক্ষক, হাকিম, বৈদ্য এদের নিয়েই মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল।

মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে সরকারি চাকুরিজীবী, বণিক, এজেন্ট, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক প্রভৃতি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে বিভিন্ন উপায়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল। যেমন—

করণিক = পলাশির যুদ্ধজয়ের পরবর্তী ১০০ বছরে ইংরেজরা ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকার বিরাট প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্রশাসনের নিম্নস্তরের পদগুলিতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগ করে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এসব ভারতীয় কর্মচারী মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

আইন পেশায় যুক্ত ডারতীয় শ্রেণি = পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রচুর ভারতীয় অত্যন্ত লাভজনক আইন পেশায় নিযুক্ত হয়। এভাবে আমলা, উকিল, মোক্তার, কেরানি, মুহুরি প্রভৃতি বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত ভারতীয়ের উদ্ভব ঘটে।

বাণিজ্যের কাজে যুক্তকর্মী = ইংরেজরা ভারতে বাণিজ্যিক পণ্যের আদানপ্রদান অব্যাহত রাখা ও ব্যাবসায়িক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য শিক্ষিত ভারতীয়দের সরকার, মুহরি, উকিল প্রভৃতি পদে নিযুক্ত করে বাণিজ্যের অগ্রগতি অব্যাহত রাখে।

সরকারি অফিসের কর্মী = ভারতে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় হওয়ার পর থেকে এদেশে কলেজ, অফিস, আদালত, হাসপাতাল প্রভৃতির প্রতিষ্ঠা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত প্রচুর ভারতীয় নিযুক্ত হয়। এরাও মধ্যবিত শ্রেণির অন্যতম অংশ ছিল।অন্যান্য = উপরি-উক্ত শ্রেণির মানুষ ছাড়াও সামরিক বিভাগে নিযুক্ত কর্মী, শিল্পের সঙ্গে নিযুক্ত শ্রেণি, বিভিন্ন মধ্যস্বত্ত্বভোগী শ্রেণির মানুষও মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত