আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (মান-১)
1) কবি শঙ্খ ঘোষের ছদ্মনাম কী? –কুন্তক
2) শঙ্খ ঘোষের আসল নাম কী? –চিত্তপ্রিয় ঘোষ
3) কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের? –জলই পাষাণ হয়ে গেছে
4) আমাদের ডান পাশে কী? –ধস
5) গিরিখাদ রয়েছে? –আমাদের বামে
6) আমাদের মাথায় কী? –বোমারু
7) বোমারু কথার অর্থ কী? –বোমা নিক্ষেপকারী যুদ্ধবিমান
8) আমদের পায়ে পায়ে কী? –হিমানীর বাঁধ
9) আমাদের ঘর কোথায়? –উড়ে গেছে
10) আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে’ কোথায়? –কাছে দূরে
11) আমাদের কী নেই? –ইতিহাস
12) আমাদের কেমন ইতিহাস? –চোখমুখ ঢাকা ইতিহাস
13) চোখমুখ ঢাকা’ এর অর্থ কী? –আমাদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ পায়নি
14) আমরা ভিখারি———-? –বারোমাস
15) পৃথিবী মরে গেছে বলে কবি আশঙ্কা করছেন কেন? –হানাহানি ও মৃত্যুর পৃথিবীতে মানবিকতার অভাব বলে
16) হয়তো মরে গেছে’ কার কথা বলা হয়েছে? –পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে
17) আমরা দোরে দোরে ফিরেছি কেন? –বারবার সাহায্যের প্রার্থনা জানানোর জন্য
18) ক–জন বাদে বাকিরা কোথায় গেল? –হানাহানি, মৃত্যু আর মন্বন্তরের মাঝে হারিয়ে গেছে।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (মান-১)
[১] আমাদের ডান ও বাঁ পাশে কবি কীসের উল্লেখ করেছেন? উ—যুদ্ধ, হিংসা, হানাহানির কারণে আজ সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন, তারা চলেছে কোনো এক অনিশ্চিত পথে যার চারপাশ প্রতিকূলতায় আবৃত। ডান পাশে রয়েছে ধস এবং তার বাঁ পাশে ‘গিরিখাদ’ যা অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক।
[২] “আমাদের মাথায় বোমারু”—এ কথা বলার কারণ কী?
উ—বোমানিক্ষেপকারী যুদ্ধবিমান হল বোমারু। বর্তমান শতা সূচনায় ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রগুলি নানা অছিলায় দুর্বল রাষ্ট্রের। বোমাবর্ষণ করে শাস্তিভঙ্গ করেছে বলে এ কথা বলা হয়েছে।
[৩] ‘পায়ে পায়ে ‘হিমানীর বাঁধ’ বলতে কবি কী বলেছেন?
উ—হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে নিরীহ সাধারণ মানুষের বেঁচে থা পথ ক্রমশ দুর্গম হয়ে উঠছে। ‘হিমানী’ অর্থাৎ তুষারাবৃত পড়ে। যেমন দুষ্কর, তেমনই বেঁচে থাকার পথ ধরে এগোনোও কষ্টকর।
[৪] “ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে” – কী ছড়ানো রয়েছে?
উ—শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি‘ কবিতাটিতে নিষ্পাপ মানবশিশুর শব বা মৃতদেহ ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
[৫] শিশুদের শব যেখানে সেখানে ছড়ানো আছে কেন?
উ—শিশুঘাতী, নারীঘাতী, কুৎসিত, বীভৎস, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ফলে যেখানে সেখানে শিশুদের শব ছড়িয়ে আছে।
[৬] “আমরাও তবে এইভাবে”—‘এইভাবে’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন?
উ—সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের বোমারু বিমানের নির্বিচার বোমাবর্ষণে কত দুর্বল রাষ্ট্রের নিরীহ শিশুর প্রাণ গিয়েছে। আমরাও’ অর্থাৎ বাকি সাধারণ মানুষও কী এভাবেই প্রাণ দেব না কি সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ জানাব, বক্তা তাই জানতে চেয়েছেন।
[৭] “এ মুহূর্তে মরে যাব না কি?” – এখানে কবির আশঙ্কা না ভয়কে জয় করার অঙ্গীকার প্রকাশিত হয়েছে?
উ—উদ্ধৃত অংশে আপাতভাবে মনে হতে পারে কবি মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে বেঁচে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার এই অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
[৮] “আমাদের পথ নেই আর”– আমাদের পথ নেই কেন?
উ—সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, যুদ্ধবাদের নিয়তিন আশ্রয়হীন, সর্বহারা মানুষের মুক্তির পথ রোধ করেছে। তাদের প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে। তাই তাদের বেঁচে থাকার কোনো পথই অবশিষ্ট নেই।
[১০] “আমাদের পথ নেই আর”–তাহলে আমাদের করণীয় কী? উ—আমাদের অর্থাৎ সর্বহারা মানুষদের বাঁচার পথ যখন ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসে, তখন সহমর্মিতার সঙ্গে আরও বেশি সংঘবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।
[১০] “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”—বক্তার কখন এমন মনে হয় ?
উ—হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে বোমারু বিমানের হানায় যখন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুভয় তাড়া করে, সেই বিপন্ন সময়ে বক্তার এমন মনে হয়।
[১১] “বেঁধে বেঁধে থাকি”—বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ কী?
উ—বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ মিলেমিশে এক হয়ে থাকা, সংঘবদ্ধ হয়ে সহমর্মিতার সঙ্গে বাঁচা।
[১২] “আমাদের ইতিহাস নেই‘—এ কথা বলা হয়েছে কেন?
উ—আমরা সাধারণ গরিব মানুষ। আমাদের জীবন-জীবিকা-আশ্রয় অনিশ্চিত। সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধের পরিবেশ ঘনিয়ে তুলে আমাদের শিকড় ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে উন্মুখ। তাই আমাদের ইতিহাস নেই।
[১৩] “অথবা এমনই ইতিহাস” – পঙক্তিটির বক্তব্যবিষয় লেখ।
উ—কবি বলেছেন বঞ্ঝিত সর্বহারা মানুষের কোনো গৌরবময় ইতিহাস নেই। চিরকাল তারা নির্যাতিত। চারপাশে প্রতিবন্ধকতায় বেঁচে থাকার পথ অনিশ্চিত্ত, বিপজ্জনক। রাষ্ট্রনায়করা, সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের স্বার্থে তাদের অন্ধকারে বেঁধে রেখেছে।
[১৪] “আমাদের চোখমুখ ঢাকা”– “চোখমুখ’ ঢাকার কারণ কী?
উ—আমরা অর্থাৎ শান্তিপ্রিয় সর্বহারা মানুষ সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার। স্বার্থসিদ্ধির কারণে এরা প্রতিনিয়ত সাধারণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই বঞ্চনার ইতিহাসই বয়ে চলেছে যুগান্তরে, যেখানে অবক্ষয়ের অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে মানুষের মানবিক সত্তা। একেই কবি ‘চোখমুখ ঢাকা’ বলেছেন।
[১৫] “আমরা ভিখারি বারোমাস” – এ কথা বলার কারণ কী ? উ—সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রশক্তি পারস্পরিক যুদ্ধে অথবা দুর্বল রাষ্ট্রে অধিকার কায়েমের জন্য সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে। সাধারণ মানুষ আশ্রয় ও জীবিকা হারিয়ে ভিখারিতে তাই পরিণত হয়।
[১৬] “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে”—’হয়তো‘ বলা হয়েছে কেন?
উ—সাম্রাজ্যলোভী যুদ্ধবাজরা পৃথিবীর পরিবেশকে দূষিত করছে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিকতা। পৃথিবী এখন জীবহৃত। তাই “হয়তো’ শব্দের মাধ্যমে পৃথিবীর যথার্থরূপে বেঁচে থাকার বিষয়ে সংশয় প্রকাশিত হয়েছে।
[১৭] “পৃথিবী হয়তো গেছে মরে’ – এ কথা বলা হয়েছে কেন? উ—পৃথিবী এখন যেভাবে আছে তাকে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা বলা যায় না। যুদ্ধ শোষণ, বন অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। তাই পৃথিবী তথা পৃথিবীর মানুষের মনুষ্যত্ব যেন মরে গিয়েছে।
[১৮] “আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।” – দোরে দোরে ফিরেছি কেন?
উ—জীবনের বিপন্নতা থেকে, যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের তথা সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে, শাস্তি সুস্থিরতার আবেদন-নিবেদন নিয়ে আমরা দোরে দোরে ফিরেছি, ফিরেছি একটু শাস্তির আশ্রয়ের জন্য।
[১৯] “তবু তো কজন আছি বাকি”– ‘তবু তো’ বলার কারণ কী?
উ—যুদ্ধের ভয়াবহতা, আশ্রয়হীনতা, মাথার উপর বোমারু বিমান, পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ, দুয়ারে মৃত্যুর কড়া নাড়া সত্ত্বেও এখনও বেঁচে আছে সব হারানো কিছু মানুষ। ‘এসব সত্ত্বেও’ বোঝাতে ‘তবু তো’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
[২০] “তবুও তো ক’জন আছি বাকি।” – কারা বাকি আছে? উ—যুদ্ধের বয়াবহতা কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ। এরই মাঝে সর্বহারা অতি সাধারণ মেহনতি মানুষ প্রতিবন্ধকতাকে মেনে নিয়েছে। তাদের রয়েছে বঞ্চনার ইতিহাস, সংঘবদ্ধ হয়ে বাঁচার স্বপ্ন এবং মানবিকতা। এখানে এ সমস্ত বারোমাসের ভিখারিরা এখনও ‘বাকি’ আছে।
[২১] আয় আরো হাতে হাত রেখে”—কবি কার হাতে কেন হাত রাখতে চাইছেন?
উ—যুদ্ধবিধ্বস্ত বিপন্ন পৃথিবীতে শাস্তি ও সুস্থিরতার লক্ষ্যে কবি সাধারণ মানুষ হিসেবে জনতার হাতে হাত রেখে মানববন্ধন গড়ে তুলতে চাইছেন, চাইছেন প্রতিবাদী মানবতার শৃঙ্খল রচনা করতে।
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇