বক্সারের যুদ্ধের (১৭৬৪ খ্র.) গুরুত্ব লেখ।

[] যুদ্ধের সুচনা = বাংলার নবাব মিরকাশিম অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই সম্মিলিত বাহিনী ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের ফলে বাংলার প্রকৃত স্বাধীন নবাবীর অবসান ঘটে এবং ইংরেজদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়।

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব

ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল।

(১) সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি = ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পলাশির যুদ্ধের চেয়ে বক্সারের যুদ্ধের বেশি গুরুত্ব ছিল। পলাশির যুদ্ধের দ্বারা ভারতে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়, বক্সারের যুদ্ধের দ্বারা তার ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয়।

(২) মিরজাফরের প্রত্যাবর্তন = মিরকাশিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ইংরেজ কোম্পানি মিরজাফরকে দ্বিতীয়বারের জন্য বাংলার নবাব হিসেবে ঘোষণা করে। যুদ্ধের পর তিনি ইংরেজ কোম্পানি ও তার কর্মচারিদের বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে রাজি হন। মিরজাফরের মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক পুত্র নজমউদ্দৌলাকে বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়।

(৩) শাসনক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার = বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের দ্বারা ইংরেজ কোম্পানি বাংলার চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং নবাব কোম্পানির হাতের পুতুলে পরিণত হয়। কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে নবাবের সকল সামারিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে কোম্পানির বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে।

(৪) অর্থনৈতিক আধিপত্য = এই যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজ কোম্পানি বাংলার অর্থনীতির ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। কোম্পানির কর্মচারিরা বাংলায় অবাধ ও নির্লজ্জ শোষণ ও লুণ্ঠন শুরু করে।

(৫) দেওয়ানি লাভ = যুদ্ধের পর কোম্পানি দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। এর ফলে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং রাজস্ব আদায়ের অধিকার আইনগত বৈধতা পায়।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত