সিরাজ-উদদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ লেখ।

[] সূচনা = নবাব আলিবর্দি খাঁর কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র ২৩ বছরের যুবক সিরাজ-উদদৌলাকে (১৭৫৬-১৭৫৭ খ্রি.) তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। সিরাজ সিংহাসনে বসার (১৭৫৬ খ্রি.) পর আলিবর্দির জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম, মধ্যম কন্যার পুত্র সৌকং জঙ্গ ও অন্যান্য অনেক নিকট আত্মীয় সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। একই সঙ্গে সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয় যে, ইংরেজদের সঙ্গে তার যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

বিরোধের কারণ

সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের নানা কারণ বর্তমান ছিল—

(১) আনুগত্যদানে বিলম্ব = সিরাজ বাংলার নবাবি সিংহাসনে বসলে প্রথা অনুযায়ী নবাবের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি বণিকরা উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ইচ্ছে করে উপটৌকন পাঠাতে দেরি করে এতে সিরাজ অপমানিত হন।

(২) ষড়যন্ত্রের সংবাদ = ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগম ও সৌকৎ জঙ্গের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার খবর সরাজ পেয়ে যান। ফলস্বরূপ নবাব ক্ষিপ্ত হন।

(৩) কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান = আর্থিক তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত রাজবল্লভ নবাবকে হিসাব ও প্রাপ্য অর্থ না দিয়ে পুত্র  কৃষ্ণদাস (বা কৃষ্ণবল্লভ)-কে ধনরত্ন ও আত্মীয়স্বজন সহ কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন। ইংরেজরা নবাবের নির্দেশ উপেক্ষা করে কৃষ্মবল্লভকে নবাবের হাতে ফেরত না দিয়ে তাঁকে কলকাতায় আশ্রয় দেয়।

(৪) দুর্গনির্মাণ = যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ ও ফরাসি উভয়পক্ষই বাংলায় দুর্গনির্মাণ শুরু করে। সিরাজের নির্দেশ অনুসারে ফরাসিরা দুর্গনির্মাণ বন্ধ করলেও ইংরেজরা নবাবের নির্দেশকে অমান্য করে।

(৫) দস্তকের অপব্যবহার = কোম্পানির কর্মচারীরা দস্তকের অপব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাবসায় তা ব্যবহার করতে থাকে। সিরাজ এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেও কোম্পানি তাতে মোটেই কর্ণপাত করেনি।

[] উপরি-উক্ত কারণে সিরাজ ইংরেজদের প্রতি ক্ষুব্ধ হল এবং ফলশ্রুতিতে ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত