।। ধ্বংসের কারণ ।।
ভারতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনে এদেশের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। এর বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—
[১] বিলাতি সস্তা পণ্য–ইংল্যান্ড থেকে যেসব শিল্পজাত সামগ্রী বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতের বাজারে প্রবেশ করে, সেগুলি ভারতীয় পণ্যের চেয়ে দামে সস্তা ছিল। ফলে এদেশের দরিদ্র মানুষ ভারতের দামি পণ্য ছেড়ে সস্তা পণ্যের দিকে ঝুঁকেছিল।
[২] উন্নত শিল্পসামগ্রী—ইংল্যান্ডে উৎপাদিত পণ্যের মান অনেক উন্নত ছিল। টেকসই বস্ত্র খুব সহজেই ভারতীয়দের নজর কেড়েছিল।
[৩] শিল্পবিপ্লবের প্রভাব—ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে প্রচুর পণ্য কারখানায় তৈরি হতো যা ভারতের বাজারে ক্রমশ ছেয়ে যায়।
[৪] কাঁচামাল সরবরাহ—ব্রিটিশ সরকার ভারতকে কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে পরিণত করে। ফলে ভারতের শিল্প ব্যাহত হয়।
[৫] শুদ্ধ সংরক্ষণ নীতি—ব্রিটিশ সরকারের শুল্কনীতির ফলে ভারতীয় শল্প ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।
।। দেশীয় শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলাফল ।।
ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলাফল ছিল গভীর ও
সুদূরপ্রসারী।
[১] শিল্পপণ্য আমদানি = শিল্প-বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে ভারত একটি রপ্তানিকারী থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হয়। ইংল্যান্ড থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ শিল্পজাত সামগ্রী ভারতে আমদানি শুরু হয়।
[২] কাঁচামাল রপ্তানি = ভারতীয় শিল্প ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ভারতের কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি হতে শুরু করে। ভারতে উৎপাদিত কাঁচা তুলো, কাঁচা রেশম, নীল, চা, প্রভৃতি কাঁচামাল নিয়মিত ইংল্যান্ডের কারাখানাগুলিতে চলে যেতে থাকে।
[৩] বেকারত্ব বৃদ্ধি = শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের ফলে দেশে তীব্র বেকার সমস্যা দেখা দেয়। বেকার শিল্পী ও কারিগররা অন্য পেশায় মন দেয় এবং অধিকাংশই কৃষিকার্যে নিযুক্ত হয়। ফলে কৃষির ওপর চাপ বাড়ে। এভাবে দেশে কৃষিজীবী ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
[৪] দারিদ্র্য বৃদ্ধি = শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ভারতীয় জনজীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে।