--------------------------------------------------
--------------------------------------------------


--------------------------------------------------
--------------------------------------------------

অব-শিল্পায়ন বলতে কী বোঝায়? অবশিল্পায়নের কারণ লেখ।

[] অবশিল্পায়ন = অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। যদি দেশের মানুষ শিল্পকর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় আয়ে কৃষিজ অংশ বাড়তে থাকে ও শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-শিল্পায়ন বলে। অব-শিল্পায়নের ফলে ভারতের বেকার শিল্পী ও কারিগররা কৃষিক্ষেত্রে ভিড় জমায়। এর ফলে কৃষির ওপর চাপ বাড়ে এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

সাধারণভাবে ভারতীয় হস্তশিল্পের বিপর্যয়কে ঐতিহাসিকগণ অব-শিল্পায়ন বলেছেন। দাদাভাই নওরোজি, রমেশচন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং রজনীপাম দত্ত, বি. ডি. বসু, বিপান চন্দ্র প্রমুখ পণ্ডিতগণ ঔপনিবেশিক শাসনের যুগে ভারতের অব-শিল্পায়ন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

অব-শিল্পায়ণের কারণ

ঔপনিবেশিক ভারতে অব-শিল্পায়নের বিভিন্ন কারণগুলি হল—

[১] পণ্য রপ্তানিতে বাধা = দেশের বাজারে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ সরকার সুনজরে দেখেনি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিল্পপতিরা ভারতীয় সুতি ও রেশমি বস্ত্র আমদানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং সরকারের কাছে তাদের শিল্পক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি বলবৎ করার দাবি জানায়।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে এক আইনের মাধ্যমে বাংলা, পারস্য ও চিনের উৎপাদিত রেশম বস্ত্রের ব্যবহার ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ করে। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে এক আইনের মাধ্যমে ভারতের রঙিন সুতিবস্ত্র ইংল্যান্ডে আমদানি নিষিদ্ধ হয়।

[২] ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব = অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয়। যন্ত্রের সাহায্যে অনেক কম সময়ে উন্নত মানের ও সস্তা শিল্পপণ্য কলকারখানাগুলিতে তৈরি হতে থাকে। এইসব শিল্পপণ্য ভারতের বাজার দখল করতে থাকে।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে আইনের মাধ্যমে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটলে ইংল্যান্ডের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে ভারতে আসতে থাকে। তারা এদেশে জমিজমা কিনে তাতে নীল, কফি, রবার, তামাক, তুলো প্রভৃতির চাষ শুরু করে এবং এইসব কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রপ্তানি করতে থাকে। ফলে ভারতীয় শিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।

[৩] রাষ্ট্রীয় নির্যাতন = ভারতীয় শিল্পী ও কারিগরদের ওপর ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতন দেশীয় শিল্পের যথেষ্ট ক্ষতি করে। কোম্পানির কর্মচারীরা তাঁতিদের অগ্রিম দাদন নিতে এবং তাদের ভয় দেখিয়ে শুধু ইংরেজ কোম্পানির জন্য সুতিবস্ত্র বুনতে বাধ্য করত। কোম্পানির কাছে তাদের বস্ত্র বিক্রি করতে বাধ্য থাকত। কোনো ভারতীয় বণিকদের কাছে তারা বস্ত্র বিক্রি করতে পারত না। কোম্পানি একচেটিয়াভাবে বাজার দখল করে তাঁতির কাছে উচ্চমূল্যে এই তুলো বিক্রি করত।

[৪] শিল্পের অবক্ষয় = ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের অসম শুল্কনীতির ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পজাত পণ্যের বাজারগুলি ছেয়ে যায় ও ভারতীয় শিল্পপণ্য ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়।

ভারতের বাজার ইংল্যান্ডে উৎপাদিত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, সুতিবস্ত্রে ছেয়ে যায়। ইল্যান্ডের শিল্পজাত সামগ্রীগুলি বিনাশুল্কে ভারতের বাজারে আসতে থাকে। বিলাতি পণ্যগুলি ভারতে বিনাশুল্কে প্রবেশ করলেও ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় পণ্যগুলির বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বিরাট শুল্কের বোঝা চাপায়। এই অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় বণিকরা বাধ্য হয়েই পিছু হঠতে থাকে।

[] ক্রমশ ভারতীয় শিল্পের অবক্ষয় দেখা দিতে শুরু করে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত