ভূমিকা: জাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিকাশে সাহিত্য, সংবাদপত্র এবং বিশেষ কিছু ঘটনা এদেশীয় মানুষদের এক সূত্রে বাঁধতে সাহায্য করে। এই সাহিত্য উপাদানের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক’টি অন্যতম।
নীলকরদের শোষণ: নীলকর সাহেবরা বাংলার নীলচাষিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চাষি তার জমিতে নীলচাষ করতে বাধ্য হত, নীলচাষের জন্য চাষিদের আগাম টাকা বা দাদন নিতে বাধ্য করা হত।
নীলকরদের অত্যাচার: চাষিরা নীলচাষে অনিচ্ছুক হলে নীলকর সাহেবরা বিভিন্নভাবে অত্যচার করত। যেমন— চাষির গোরু-ছাগল আটক করা, চাষিদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া বা আগুন ধরিয়ে দেওয়া, চাষির ছেলেমেয়েদের বন্দি করা ইত্যাদি। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতে নীলকরদের প্রভাব ছিল।
শিক্ষিত শ্রেণির সমর্থন: নীলকরদের শোষণ, নীলচাষিদের দুর্দশা ও সংঘবদ্ধ আন্দোলন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ ইত্যাদি। ‘নীলদর্পণ’ নাটক এই ঘটনাকে জীবন্ত করে উপস্থাপিত করে। এর ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীলচাষিদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়।
মূল্যায়ন: দরিদ্র নীলচাষিদের স্থানীয় স্তরের এই আন্দোলন ভারতের জাতীয়তাবাদ গঠনের পথ প্রশস্ত করে। হিন্দু-মুসলিমদের ঐক্য, অহিংস পথে সংঘবদ্ধ আন্দোলন, ইংরেজ বিরোধিতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। ‘নীলদর্পণ’ নাটকের মাধ্যমে শিক্ষিত শ্রেণি জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়।