[] নীলকরদের বিরুদ্ধে ১৮৫৯ সালে চাষিরা নীলবিদ্রোহে সামিল হয়। নীল বিদ্রোহের পিছনে একাধিক কারণ সক্রিয় ছিল। যথা—
[১] নীলকরদের অত্যাচার—নীলকররা নীলচাষিদের নানাভাবে অত্যাচার করে নীলচাষ করতে বাধ্য করত। যেসব চাষিরা চাষ করতে চাইত না তাদের প্রহার করা, আটকে রাখা, স্ত্রী-কন্যার সম্মানহানি করা, চাষের সরঞ্জাম লুঠ করা, ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া প্রভৃতি নানাভাবে চাষিদের অত্যাচার করত। চাষিরা অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
[২] দাদন প্রথা—নীলকররা চাষিদের দাদন বা অগ্রিম অর্থ দিত। অভাবের সময় চাষিরা অগ্রিম নিত। এরফলে চাষির সবচেয়ে ভালো জমিতে নীলচাষ করাতে বাধ্য করত। একবার কেউ দাদন নিলে সে আর নীলচাষের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারত না।
[৩] প্রতারণা ও কারচুপি—নীলকররা নীলচাষিদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করত। নীল কেনার সময় নীলের ওজন কম দেখাত, কম দামে নীল বিক্রি করতে বাধ্য করত, তা ছাড়া জোর করে বিভিন্নভাবে অর্থ আদায় করত।
[৪] অবিচার—অত্যাচারিত নীলচাষিরা আদালতে গিয়েও সুবিচার পেত না। আইন ছিল নীলকরদের স্বার্থরক্ষার জন্য, চাষিদের জন্য নয়।
নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা সে সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও লেখায় প্রকাশিত হয়েছে। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা এবং দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।