ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে জাতি-প্রশ্নের সদর্থক ও নঞর্থক প্রভাবগুলি কী ছিল? [২০১৮]

[উত্তর] উনিশ শতকের বহু আগে থেকেই ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে শাসক-জাতি শাসিত-জাতির বিরুদ্ধে তীব্র জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে। উপনিবেশগুলিকে জাতিগত ব্যবধানের সু- ও কু- এই দুই প্রভাবই প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন—

নঞর্থক প্রভাব বা খারাপ দিক

অমানবিকতা–এশিয়া ও আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ শাসিত জাতিগুলি দীর্ঘকাল ধরে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবহেলা ও অমানবিকতার শিকার হয়। বিভিন্ন স্থান ও প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় জাতির জন্য সংরক্ষিত থাকায় দেশীয় জাতিগুলি সেগুলি ব্যবহারের অধিকার হারায়। কোনো দেশীয় ব্যক্তি কুকুরের সমতুল্য গণ্য হত।

জাতিগত শোষণ—ঔপনিবেশিক অঞ্চলে শাসক ও শাসিতের মধ্যেকার জাতিগত ব্যবধান উপনিবেশের মানুষের ওপর তীব্র শোষণ ও অত্যচারের সুত্রপাত ঘটায়। পরাধীন জাতিগুলির ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝা চাপিয়ে দেয় যাতে তীব্র আর্থিক শোষণ, খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটনা পরাধীন জাতিগুলিকে সীমাহীন দুরবস্থায় ফেলে দেয়।

শ্রমিক রপ্তানি–শ্বেতাঙ্গ জাতিগুলি ভারত, চিন-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকদের চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় ও উপনিবেশে পাঠাতো। উপনিবেশের খামারগুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আসত।

শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্য–উপনিবেশে শাসক শ্বেতাঙ্গ ও শাসিত কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে তীব্র বৈষম্য ছিল। কৃষ্ণাঙ্গরা কোনোরকম সুযোগ সুবিধা পেত না। পেত না সঠিক বিচার। তারা সব ক্ষেত্রে অবহেলিত হত।

সদর্থক প্রভাব বা ভালো দিক

জাতিগত-প্রশ্ন প্রসঙ্গে শুধুমাত্র নঞর্থক প্রভাবই ছিল না, এর ভালো দিকও ছিল। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো—

[ক] জ্ঞানের প্রসার

[খ] শিল্পকলার উন্নতি

[গ] বিজ্ঞানের উন্নতি

[ঘ] পাশ্চাত্য উদার সংস্কৃতির সান্নিধ্য

[ঙ] নবজাগরণ উপরের প্রতিটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতির উন্নতির জন্য। ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে বিজ্ঞান, শিল্পকলায় শাসিত জাতি উন্নতি করতে থাকে। পরবর্তীতে স্বাধীনতালাভের প্রশ্নে এই বিষয়গুলি অনুঘটকের কাজ করেছিল সন্দেহ নেই।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত