‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

৫–‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে উৎসব নাইয়া চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

সূচনা—মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’গল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব অর্থাৎ উৎসব নাইয়া। এক ধনী পরিবারের কাহিনি দিয়ে গল্প শুরু হলেও গল্পের মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠে সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের হতদরিদ্র হতভাগ্য উৎসব নাইয়া। আঞ্চলিক উচ্চারণে যার নাম দাঁড়ায় ‘উচ্ছব’।

[] গল্পের শুরুতে দেখা যায়—তার উগ্র চাহনি, বুনো চেহারা, পরনের ছোটো লুঙ্গি বড়ো বাড়ির বড়ো বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের মনেও শুরুতে সন্দেহ জাগায়। যদিও গল্প যত এগিয়েছে, উচ্ছব ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।

[] পরিশ্রমী ও কর্মঠ–বাদার বাসিন্দা উচ্ছব খুব পরিশ্রমী।  গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর মনিবের বাড়িতে শুধু খাবারের আশায় সে আড়াই মন কাঠ কাটে। কয়েকদিনের উপোসি উৎসব স্বজন হারানোর মানসিক যন্ত্রণাতেও পরিশ্রমী ও সে নিজের কাজে ফাঁকি দেয়নি।

[] হতভাগ্য উৎসব–উৎসব ট্র্যাজিক চরিত্র। বন্যায় জীবনের সমস্ত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে উৎসব সর্বস্বান্ত হয়। এই আঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই সরকারি লঙ্গরখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নিরুপায় উৎসব বাসিনীর সাহায্যে বড়ো বাড়িতে এলে, ভাতের বিচিত্র আয়োজন দেখে হতবাক হয়। সেখানে অফুরন্ত খাবারের আয়োজন থাকলেও, অভুক্ত, নিরন্ন মানুষকে একমুঠো ভাত দেওয়ার হুকুম নেই। শেষে উচ্ছবের ভাতের খিদে মিটলেও চুরির অপরাধে হতভাগ্য উৎসব অত্যাচারিত হয়।

[] বঞ্চিত উৎসব—মাতলার বন্যায় সংসার ভেসে গেলে শোকে উচ্ছব লঙ্গরখানায় যেতে পারেনি। আবার তার মনিব সতীশ মিস্ত্রি তাকে সামান্য চাল দিতেও কুন্ঠা বোধ করে। অথচ উচ্ছব সতীশের জমিতেই চাষের কাজ করে। একইভাবে বড়োবাড়িতে কাজের বিনিময়ে সে ভাত পায় না, তাকে চুরি করে সেই ভাত খেতে হয়। এককথায় উচ্ছব সমস্তক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে।

[] অন্যান্য—স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে উচ্ছব শোকে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। তাদের দেখার আশায় ভিটেমাটির ধ্বংসস্তূপে কয়েকদিন খুঁজেছিল তাদের। উচ্ছবের সর্বকাজে এদের কথা তার বারবার মনে পড়ছিল। স্টেশনে ডেকচি থেকে মুঠো মুঠো ভাত খাওয়ার সময়ও স্ত্রী-সন্তান হারানোর শোক সে ভোলেনি। তাছাড়া উচ্ছব খুব সরল মানুষ কিন্তু ভাতের ব্যাপারে উচ্ছব ছিল সচেতন। ভাত সে ফেলতে দেয়নি। কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে উচ্ছব সর্বহারা মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।

error: সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত